ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে কুশিয়ারার ডাইক ভেঙে প্লাবিত বিয়ানীবাজার 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৪
সিলেটে কুশিয়ারার ডাইক ভেঙে প্লাবিত বিয়ানীবাজার  ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেট: সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলা। পানির তোড়ে উপজেলার কাকরদিয়া গ্রামে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ডাইক ভেঙে যায়।

এতে বন্যার পানি ঢুকে তিনটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  

এছাড়া প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সঙ্গে উপজেলার যোগাযোগের প্রধান সড়ক। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে উপজেলার দুবাগ, কাকরদিয়া, মুড়িয়া ইউনিয়নের ৫০ থেকে ৬০টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।  

এর আগে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার চারটি ডাইক ভেঙে নয়টি ইউনিয়নের ৮৭ গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখের ওপর মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।  

সিলেটের প্রায় সব উপজেলায় নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও ব্যতিক্রম কুশিয়ারা। সিলেটজুড়ে যখন মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামছে তখন কুশিয়ারার চার পয়েন্টে ও সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। ইতোমধ্যে কুশিয়ারার পানি বেড়ে ১৩ উপজেলায় ১ হাজার ১৮০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এসব উপজেলায় বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জে।  

তবে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় কুশিয়ারার তীরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। গত বন্যায় পানিবন্দি থাকাবস্থায়ই ফের বন্যা কবলিত হয় ফেঞ্চুগঞ্জ। উপজেলা সদর, হাসপাতাল ও রাস্তাঘাটে এখনও পানি থৈ থৈ করছে। মানুষজন এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে দিনযাপন করছেন।  

শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুশিয়ারা পানি ফেঞ্চুগঞ্জে দিনভর বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগের দিন শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার এবং সকাল পর্যন্ত ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে কুশিয়ারার পানি প্রবাহিত হয়।  

এছাড়া বৃহস্পতিবার কুশিয়ারার পানি জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠায় গত বন্যায় ভাঙা ডাইকগুলো ডুবিয়ে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে।
আরও তিনটি ডাইক ভেঙেছে এবারের বন্যায়। ফলে জকিগঞ্জ পৌর এলাকার নরসিংহপুর, উপজেলার ছারিয়া, রারাই এলাকার তিনটি ডাইক ভেঙে এ যাবত উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে লাখের ওপর মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, গত বন্যার পানিতে বাজার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িতে পানি উঠেছিল। এখনও সেভাবেই আছে। বরং এখন বন্যা আরও বিস্তৃত হয়েছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং সিলেট পয়েন্টে কমে গিয়ে ছয় সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে সকাল থেকে সাত সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি সকালে ১১৯ থেকে নেমে ১০৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি শনিবার বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি শুক্রবার থেকে আরও চার সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  আর গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৫ দশমিক ছয় মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন নয় হাজার ৩৬৭ জন। এছাড়া সিলেটের ১৩টি উপজেলার এ পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন এবং ১০১টি ইউনিয়নের ১১৮০টি গ্রাম বন্যাকবলিত দেখানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২৪
এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।