ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স একটি আলিশান ভবন।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন আবেদ আলী।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার আবেদ আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পদের এই বিবরণী দিয়েছেন, তবে ধারণা করা হচ্ছে আবেদ আলীর আরও সম্পদ রয়েছে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, তদন্তে তার সমস্ত কিছু বেরিয়ে আসবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার (৮ জুলাই) রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এইক সঙ্গে অভিযানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত পিএসসির দুজন উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ আরও ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্ম কমিশন আইনে একটি মামলা করে সিআইডি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ জনকে আসামি করা হয়। এতে আসামির সংখ্যা দেখানো হয়েছে অর্ধশতাধিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. আজাদ রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়ামসহ গ্রেপ্তার ১৭ আসামিকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ১০ আসামি তাদের দোষ স্বীকার না করায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
তিনি বলেন, কারাগারে থাকা ১০ আসামিকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামীকাল বুধবার (১০ জুলাই) রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।
এদিকে, আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়াম ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই ছাত্রলীগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আসামি আবেদ আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ভবনটির পঞ্চম তলায় দুটি ও চতুর্থ তলায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। পাইকপাড়ায় তার একটি ছয়তলা বাড়ি রয়েছে। ব্যাংকে তার নগদ টাকাও রয়েছে। তবে কত টাকা সেটি এখনো বলেননি।
সিআইডি সূত্র জানায়, গত বছরের শেষের দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ৩ হাজার ১০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের অনেকের কাছে ফাঁস করা প্রশ্ন বিক্রি করেছেন আবেদ আলী। সেই সঙ্গে তাদের চাকরিও হয়েছে।
ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে পিএসসিতে চাকরি নেন আবেদ আলী
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ আবেদ আলী পিএসসিতে চাকরি নিয়েছিলেন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে। তার বাড়ি মাদারীপুরে। তবে তিনি ঠিকানা দিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জের। ২০১৪ সালেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পিএসসির চাকরি থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
দুই বছর আগে থেকে আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসারে তার নিজ এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। তিনি নতুন উপজেলা ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। এই নির্বাচনের তফসিল এখনো হয়নি। তবে তিনি প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এলাকায় তিনি দামি গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করে আসছিলেন।
এছাড়া তিনি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেদ আলী এমন প্রচার-প্রচারণাচালিয়েছেন মূলত নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে৷
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৪
এসজেএ/এইচএ/