কক্সবাজার: একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ডুবে যাচ্ছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন, প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাজারঘাটাসহ পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভারী বর্ষণে শহরের সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ে।
গত দুই বছর ধরে ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে বাধার কারণে এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার শহরের পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কলাতলী। এখানে অন্তত ৩৫০টি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস আছে। অধিকাংশ পর্যটক বেড়াতে এসে এখানেই ওঠেন। সেখানেও রাস্তাঘাটে প্রায় হাঁটুপানি জমে গেছে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পর্যটনে অফসিজন চলছে। তারপরও সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক আসেন।
পর্যটন ব্যবসায়ী সাইফুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে পর্যটন এলাকার সব রাস্তাঘাট তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। পর্যটকরা হোটেল কক্ষ থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
মকবুল আহমদ নামে কলাতলী সড়কের একটি রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, ভোর থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে রেস্তোরাঁয় পানি ঢুকে পড়েছে। এমন অবস্থা হলে বর্ষায় ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে।
শুধু কলাতলী নয়, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক ও ১২টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ড্রেন উপচে ঢলের পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়া এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের নুনিয়ারছড়া, নতুন বাহারছড়া এলাকায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকেছে। অনেক বাড়িতে রান্নাবান্নাও বন্ধ হয়ে গেছে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই কক্সবাজার শহরের রাস্তা-ঘাট ও বাড়ি-ঘর ডুবে যাচ্ছে। এখনই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে জলাবদ্ধতার সম্ভাব্য কারণ খুঁজে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত কক্সবাজার শহর। দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত পাহাড় কাটা, খাল-ঝিরি ও ড্রেনের জায়গা দখল হয়ে আছে। এতে একটু বৃষ্টি হলেই পাহাড় বেয়ে মাটি এসে ড্রেন ভরে যাচ্ছে। ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
অপরদিকে জেলার সদর, রামু, চকরিয়া, ঈদগাঁও, পেকুয়া, উখিয়া ও মহেশখালীতে টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চল ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৩৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও দুইদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে পাহাড় ধসের ঝুঁকি আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এসবি/এফআর