ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আতঙ্ক কাটিয়ে স্বস্তি ফিরছে মিরপুরে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
আতঙ্ক কাটিয়ে স্বস্তি ফিরছে মিরপুরে

ঢাকা: চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে রাজধানীর মিরপুরে ব্যাপক সহিংসতার পর যে ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সতর্কাবস্থানের কারণে স্বস্তি ফিরছে জনমনে।

খুলছে ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটের দোকান, বাণিজ্যিক, ব্যাংক-বিমাসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। যদিও কারফিউ থাকার কারণে লোক সমাগম কম দেখা যাচ্ছে রাস্তায়।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের আশপাশের প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও ফুটপাত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, বিআরটিএ থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের চারদিকে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। দোকান খুলেছে ফুটপাতেরও। কিন্তু পথচারী বা ক্রেতা কম থাকার কারণে এসব দোকানে বেচাকেনা আগের মতো নেই।

দোকানদাররা বলছেন, আশপাশে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে। এখন সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। এতে ভাঙচুর বা কোনো ধরনের সন্ত্রাস হবে না বলে আমরা নিশ্চিত। কিন্তু ক্রেতারা আসছেন না। মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে। তবে বিক্রেতারা আশা করছেন, স্বাভাবিক অবস্থা ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাও ধীরে ধীরে বাড়বে।  

মিরপুরের একটি সুপার শপের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আন্দোলন শুরু হওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল শুরু হলে গত বৃহস্পতিবারই (১৮ জুলাই) দোকান বন্ধ করে দিই। বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৮ ও ১৯ জুলাই) ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলাকালে দোকানের টুল ও ত্রিপল নিয়ে গিয়ে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। কারফিউ শিথিল হওয়ার পর গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (২৪ ও ২৫ জুলাই) দোকান খুললেও তেমন বেচাকেনা হয়নি। আজকে আবার খুলেছি।

পাশের মার্কেটে পোশাকের দোকানও খুলেছে। ১২টা পর্যন্ত দুইজন ক্রেতা এসেছেন একটি দোকানে। সেই দোকানের কর্মচারী রইসুদ্দিন বলেন, মানুষ আসা শুরু হয়েছে। তবে আগের মত নেই। আশা করছি আস্তে আস্তে ক্রেতা বাড়বে। মনে হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।

পাশেই বাটার দোকান, পদ্মা ব্যাংক ও স্যামসাংয়ের একটি শোরুম বাইরে থেকে থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে কাঁচ ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পাশে অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংক, সুপারশপ, জুতার শোরুম, ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্কেট থাকলেও সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এসব মার্কেটের বাইরের সিসি ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। এদিন মিরপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালের বিপরীতে ফায়ার সার্ভিসের ফুটপাতে গাছ লাগানোর কাজ চলতে দেখা যায়।

মিরপুরে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসের দক্ষিণ পাশে ফুটওভার ব্রিজের পূর্ব পাশে বসেন হকাররা। সকাল থেকে এখানে এক আঁখের শরবত বিক্রেতা ও আরেক লেবুর শরবত বিক্রেতা বসেছেন। বাকিরা এখনো আসেননি। তাদের একজন রাব্বি মিয়া বলেন, আজকে বিক্রি কম। মানুষ ভয়ে কম বের হচ্ছে। সকাল থেকে মাত্র ৬০ টাকার শরবত বিক্রি হয়েছে। অন্য শুক্রবার এই সময়ে প্রায় এক হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয়।  

সহিংসতা ও সাধারণ ছুটির মধ্যে মানুষ বাইরে কম বের হওয়ায় সংকটে পড়েছিলেন এখানকার চা বিক্রেতা, মৌসুমি ফল বিক্রেতা, বাদাম, জুস ও ঝালমুড়ি বিক্রেতার মতো কম আয়ের মানুষ। কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে মানুষকে অভয় দেওয়া, কারফিউ শিথিল করার মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যালয় খোলা ও মানুষের চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টায় বুধবার থেকে এসব প্রান্তিক মানুষও পণ্য বিক্রির জন্য বের হন।  

কথা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি আম ও পেয়ারা কেটে লবণ-মরিচ মেখে ও বিভিন্ন চাটনি ফেরি করে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বেচাবিক্রি বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে ছিলাম। সারাদিন ফেরি করে যা লাভ হয় তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। যেদিন ব্যবসা চলে না সেদিন ধারদেনা করে খেতে হয়। কদিন তাই হয়েছিল। গত দুইদিন মানুষের চলাচল শুরু করলে ব্যবসা শুরু হয়। তবে খুব একটা বিক্রি হয়নি। পরশুদিন একেবারেই ছিল না। গতকাল থেকে কিছুটা হয়েছে।

গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে মিরপুর সহিংসতা শুরু হয়। এদিন দুপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা গোল চত্বরের পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেয়। আন্দোলনকারীরা মধ্যরাত অবধি দখলে রাখে গোলচত্বর। পরদিন দুপুর পর্যন্ত চত্বরে পুলিশ-ছাত্র কোনো পক্ষ ছিল না। দুপুরে জুমার নামাজের পর ছাত্ররা আবার চত্বরটি দখলে নেয়।

শুক্রবার আন্দোলন থেকে গোল চত্বরের ওপরে ফুটওভার ব্রিজে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় পাশে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে রাখা গাড়ি ও বিআরটিএ অফিসে। এসব স্থাপনায় মধ্যরাত অবধি আগুন জ্বলতে থাকে। একই সময়ে দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দেয় মেট্রোরেলের ১০ নম্বর ও কাজীপাড়া স্টেশন। তখন বিআরটিএর সামনে ও মিরপুর থানার সামনে ছাড়া গোল চত্বরের আশপাশে ও মেট্রো স্টেশনে পুলিশ আসতে দেয়নি শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে হেলিকপ্টারের ওপর থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের। শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার পর কারফিউ জারির পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী নেমে গোল চত্বর নিয়ন্ত্রণে নেয়।  

ওই সহিংসতার শুরু থেকেই মিরপুরের প্রাণকেন্দ্র ১০ নম্বর গোলচত্বরে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থার অবসান হয়  কারফিউ জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনী নামার পর ২৪ জুলাই। এদিন সারা দেশের মতো মিরপুরেও চার ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। ফলে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র খুলতে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
জেডএ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।