ঢাকা, শুক্রবার, ১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১০ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

চৌমুহনীতে পৌরসভা ও যুবলীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
চৌমুহনীতে পৌরসভা ও যুবলীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

নোয়াখালী: এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নোয়াখালীর রাজপথ ছিল ছাত্র-জনতার দখলে।  

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে জমায়েতের কর্মসূচি থাকেলেও স্বল্প কিছু কর্মী-সমর্থক ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জোরালোভাবে মাঠে থাকতে দেখা যায়নি।

রোববার (৪ আগস্ট) সকালে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে নানান স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন হাতে দেখা যায়। অনেকের গায়ে ও মাথায় ছিলো জাতীয় পতাকা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে জেলা শহর মাইজদীর জিলা স্কুল এলাকায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় স্থানীয়রা কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। পরে পুলিশ চলে গেলে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখে।  

তবে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলির অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের মাইজদী বাজার এলাকায় অবস্থিত জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্টের বাসভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংষর্ষে ছাত্রলীগের ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়।

আহতদের মধ্যে মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, কুতুবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শেখ রাসেল ও ছাত্রলীগ নেতা সোহেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর আন্দোলনকারীরা চৌমুহনী পৌরসভায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে চৌমুহনী পৌরসভার অগ্নিসংযোগ করে। তখন তারা পৌরসভার বেশ কয়েকটি গাড়িতেও অগ্নিসংযাগ করে বলে অভিযোগ করেন, চৌমুহনী পৌরসভা মেয়র মো. খালেদ সাইফুল্লাহ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, হামলাকারীরা বেগমগঞ্জ ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালায়। ওই সময় তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্যাক্টরি, বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং চৌরাস্তা এলাকায় মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এরআগে, একই দিন সকাল ১০টার দিকে তারা বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদে ইট পাটকেল নিক্ষপ করে এবং জেলা শহরের জিসান হোটেলে হামলা চালায়।    

স্থানীয়রা জানায়, সকালে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা শহরে জাড়ো হয়। অসহযোগ আন্দোলনের ফলে জেলা শহরে সব ধরনের দোকানপাট, মার্কেট ও বিতানগুলো বন্ধ দেখা যায়। সকাল থেকে রাস্তাঘাটেও যান চলাচল কম দেখা গেছে । তবে ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি ছিল। এদিকে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি কোনো ধরনের দূরপাল্লার গণপরিবহন।

অন্যদিক, অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেও খোলা রয়েছে সরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান। অফিসগুলোতেও সেবা প্রত্যাশীদের অন্যান্য দিনের তুলনায় সেবা নিতে কিছুটা কম দেখা গিয়েছে। তবে বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে করে পুরো নোয়াখালী জুড়ে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্র নিজের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। হামলার পরও তারা অনেকক্ষন আমার বাসা ঘিরে রাখে।    

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, যুবলীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের বিষয়টি শুনেছি। যখন বিষয়টি ডিসিকে মুঠোফোনে জানায় তখন আমরা সাথে ছিলাম। কিন্ত বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। রাস্তা ঘাট এমনভাবে ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে সব জায়গায় পুলিশ পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের কোনো ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়নি। ওই সময় কোনো গুলি ছোঁড়া হয়নি। বাইরের গুলির কোন শব্দ আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই।    

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২৪
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।