ঢাকা, সোমবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩১, ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কক্সবাজার: রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের অপসারণ চান শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে নানা অভিযোগ।

এমনকি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চান। কিন্তু মুজিবুল ঘোষণা নিয়ে পাঠদান বন্ধ করে দিয়েছেন।

তার অপসারণ ও ক্লাসের ফেরার দাবি জানিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা রামু কলেজ ক্যাম্পাস ও অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ‘দফা এক দাবি এক অধ্যক্ষের পদত্যাগ’ ও ‘স্বৈরাচারের আস্তানা রামু কলেজে হবে না’ স্লোগান দেন।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ
শিক্ষার্থীরা রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাঁধা, ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানি, মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি, সরকার পতনের পর থেকে কলেজে না আসা, অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান স্থগিতের ঘোষণা ও তিন ঘণ্টা ক্লাস করিয়ে ছুটি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুজিবুলের অপসারণ চান তারা।

উল্লেখ্য, রামু কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান স্থগিতের বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। বাংলানিউজে ‘রামু সরকারি কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান স্থগিত’ শিরোনামেও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরুর পর কলেজের গণিত বিভাগের সরকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলেন। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ক্লাস শুরু করার দাবি জানান তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এমদাদুল হক বলেন, সম্প্রতি জেলাজুড়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে অধ্যক্ষ মুজিবুল রামু কলেজে কোনো ধরনের আন্দোলন করতে দেননি। ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানোর হুমকি দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর। আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার অপসারণ চাই।

তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ এই কলেজে যোগ দেওয়ার পর নানা অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণ না করা হলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সজিব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সরকার পতনের পর থেকে অধ্যক্ষ টানা কলেজে অনুপস্থিত। আমরা প্রতিদিন খোঁজ নিয়েছি,পাইনি। গত রোববার প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হলেও ১ ঘণ্টা পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভয়ে তিনি আজ থেকে ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা কাল থেকে ক্লাস চালু করার দাবি জানাই; অধ্যক্ষেরও অপসারণ চাই।

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ক্লাস হওয়ার কথা, তিন ঘণ্টাও হয় না। এভাবে বছর শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এসব বিষয়ে অধ্যক্ষের কোনো দায়ভার নাই। তিনি নিজেই বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মঈদুল হাসান জিহাদ বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়, ভর্তি বাণিজ্য, ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ মুজিবুলের বিরুদ্ধে। আমরা দুর্নীতিমুক্ত রামু কলেজ চাই।

শিক্ষার্থী মোরশেদ আলম বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতির খবর বাংলানিউজসহ প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইনের অন্তত ৩০টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, দুদক এসব অনিয়মের তদন্তও করেছে। কিন্তু জানতে পেরেছি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এবং তদন্ত কমিটির লোকজনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এসব দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। আমরা অবাক হই, এত কিছুর পরে তিনি এই পদে বহাল আছেন।

সোমবার ক্লাস বন্ধ থাকায় কলেজে শিক্ষকরা ছিলেন না। তবে অধ্যক্ষের কক্ষে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন। নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম আজ তাকে এ পদে দায়িত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলেও তিনি জানান।

সুপ্রতীম বড়ুয়ার কাছে শিক্ষার্থীরা তার দায়িত্ব পাওয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

এর আগে রোববার দুপুরে রামু সরকারি কলেজ নামে কলেজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন অধ্যক্ষ। অথচ বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় প্রথমবর্ষসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার কথা বলা হয়েছে। এমনকি পাশের সকল কলেজে পাঠদান চালু রয়েছে।

প্রসঙ্গত প্রশংসাপত্র বিতরণ, ভর্তি বাতিল, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জরিমানাসহ কয়েকটি খাতে বিনা রশিদে টাকা আদায়, অসংখ্য ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ, কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সরকারিকরণের পাঁচ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেসরকারি নিয়মে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এসব বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
এসবি/এমজে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।