মাগুরা: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের ডাকে বৈষস্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুমন শেখ (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্র।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষে সুমন শেখ নিহত হন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, ৪ আগস্ট উপজেলায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্থানের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তারা মহম্মপুর থানায় হামলা চালাতে গেলে পুলিশ গুলি করে। এ সময় সুমন নিহত হন। পরিবার দাবি করেছে, পুলিশের গুলিতে সুমন নিহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট মামলায় বীরেন শিকদারের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে তার ভাই ও শালিখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিমলেন্দু শিকদার, মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী, বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান, নহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী মিয়া, একই ইউপির চেয়ারম্যান তৈয়বুর রহমান, পলাশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সিকান্দার আলী ও সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম উল্লেখযোগ্য।
মামলায় বীরেন ও বিমলেন্দু শিকদারকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের দুজনের বিরুদ্ধে হত্যায় মদদ দেওয়ার অভিযোগও করেছে সুমনের পরিবার।
আন্দোলনের সময় মাগুরায় ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় করা মামলাতেও বীরেন ও তার ভাইকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত সুমন শেখের বাড়ি উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে। তিনি মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার দিন দুপুর একটার দিকে থানা রোডে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন সেখানে দায়িত্বরত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৌমেন সাহা জানিয়েছিলেন, মৃত অবস্থায় ওই তরুণের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নিয়ে যান।
নিহত সুমনের দাদা মো. রাশেদ শেখ গণমাধ্যমকে জানান, তার নাতির বুকে ও পাঁজরে গুলির চিহ্ন ছিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সুমন শেখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাদের বাড়িতে এসে আন্দোলনে না যাওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরে বেলা একটার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে মহম্মদপুর থানার দিকে যাচ্ছিলেন সুমন শেখ।
থানা থেকে পশ্চিম দিকে ৩৫০ গজ দূরে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের হামলার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সুমনকে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। বাদীর অভিযোগ, একই সময়ে পলাশবাড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রিভলবার দিয়ে সুমনের বুকের বাঁ পাশে গুলি করেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে উপজেলা সদরের আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজ এলাকায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। টানা দুই ঘণ্টা সংঘর্ষ চলার পর দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা পিছু হটে। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ ভবন, নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এর অন্তত এক ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে থানায় হামলা চালাতে যান বিএনপি নেতা–কর্মীরা। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুমন শেখ ও আহাদ আলী বিশ্বাস নামে দুই শিক্ষার্থী।
মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, সত্যকে আড়াল করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির নেতারা আমাদের নামে এই মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
এমজে