সিলেট: বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের মিছিলে হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগে এবার সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার, সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র, সাবেক তিন সংসদ সদস্যসহ ৫৯ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ছাত্র ও কোতোয়ালি থানাধীন খারপাড়া মিতালী ৫৮/বি বাসার জমির আহমদের ছেলে সাজন আহমদ সাজু।
আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেন মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান চৌধুরী। মামলায় সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার, তিন সংসদ সদস্য, মেয়র ছাড়াও ৮ পুলিশ কর্মকর্তা, দুই কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগের সাত নেতা, যুবলীগের সাত ও ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন ও শাবিপ্রবির এক কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খানকে। এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হলেন উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, গোয়েন্দা বিভাগের উপ কমিশনার তাহিয়াত আহমদ চৌধুরী, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমের (সিআরটি) প্রধান শাহরিয়ার আল মামুন, অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ক্রাইম ও উত্তর) সাদেক কাউছার দস্তগীর, উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ চন্দ্র দাস, এসআই সাইদুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী।
আসামি তালিকায় আরও আছেন সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকার, সদ্য সাবেক সিসিক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি, বদরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ শোভন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠু, এসআই শামীম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দিলোয়ার হোসেন রাহি, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রচার সম্পাদক ফরহাদ, শুভ, যুবলীগ নেতা জিহাদ, জাকিরুল আলম জাকির, শামিম ইকবাল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কাজী জুবায়ের, যুবলীগ নেতা হিরক রঞ্জন দে পাপলু, লিলন আহমদ, শাবিপ্রবির কলেজ ইন্সপেক্টর তাজিম উদ্দিন, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ, মো. ইয়াহইয়া, কাজী আশরাফ খান মাসুম, মনজুর, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহমদ আল কবির, সদস্য তামীম আহমদ, মস্তাক আহমদ পলাশ, তমিজ উদ্দিন, বাদল, আমির হোসেন, সৈয়দ এনায়েতুল বারী মোর্শেদ, হোসেন উল্লা নাদিম, সাব্বির, আফজাল, জাকারিয়া মাহমুদ, সনি, শেখ শাকিল, ইসমাইল মাহমুদ সুজন ও মইনুল ইসলাম মইনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আর ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট দুপুরে নগরের সোবহানীঘাট এলাকায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে অন্য আসামিরা গুলবর্ষণ করে এবং ককটেল ও বোমা নিক্ষেপ করে। এতে ছাত্র-জনতা ও পথচারী মারাত্মভাবে আহত হন।
বাদী তার মুখে ও চোখে গুলিবিদ্ধ হন, শরীরে স্প্লিন্টারের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে দাবি করে এজাহারে উল্লেখ করেন, ওইদিনের হামলার আহত অনেকে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তিনি ওইদিনের হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে সোমবার একই আদালতে সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও শাবিপ্রবি ছাত্র রুদ্র সেন নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এসব মামলায়ও সাবেক এমপি, মেয়র, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করা হয়। এছাড়া রুদ্র সেন হত্যা মামলায় শাবিপ্রবির সদ্য বিদায়ী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনসহ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা একাধিক শিক্ষককেও আসামি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৪
এনইউ/আরআইএস