খুলনা: খুলনা-৩ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান এবং এস এম কামালের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে জমি দখলের অভিযোগটি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন নগরীর খানজাহান আলী থানার এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী হারুন অর রশিদের পরিবার।
তাদের দাবি, মাহবুব ব্রাদার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জমি দখলের সহযোগিতা করেছেন বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও এসএম কামাল হোসেন।
খান জাহান আলী থানার খুলনা-যশোর মহাসড়কের মীরেরডাঙ্গায় অবস্থিত সাবেক নসু খানের ভাটাসহ অন্যান্য জমির মূল মালিক দাবিদার মোল্লা হারুন অর রশিদকে জোরপূর্বক জমি থেকে উচ্ছেদ করার প্রতিবাদ ও জমি ফেরতের দাবি তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য আকারে অভিযোগ তুলে ধরেন মোল্লা হারুন অর রশিদের বড় ছেলে মোল্লা মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, খান জাহান আলী থানার মীরেরডাঙ্গা নসু খানের ভাটার মূল মালিক সিরাজুল ইসলাম ওরফে নসু খান, তার বড় স্ত্রী ওমেদা ইসলাম খান, দ্বিতীয় স্ত্রী সাইদা সুলতানা, মেয়ে রাশিদা খান ও ছেলে সালাউদ্দিন খান। তাদের কাছ থেকে ২০০৪ সালে আমার বাবা মোল্লা হারুন অর রশিদ ৪ অক্টোবর ও ৬ জুলাই মোট তিনটি দলিল মূলে (সাব-রেজিস্ট্রি দৌলতপুরঃ দলিল নং ২৮৯৩,২৮৯২,২০৯২) মোট ১৬ বিঘা ২৪ শতক মীরেরডাঙ্গা পেট্রোলিয়াম সার্ভিসসহ কিনে নেন।
আগের মূল মালিক ১৯৬৬ সালের ১৬ মার্চ বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫ শত টাকা লোন নেন। সেই লোন মূল মালিকের ওয়ারেশগণ ১৯৮২ সালের ২৬ এপ্রিল সম্পূর্ণ টাকা ব্যাংকের সুদসহ পরিশোধ করেন। ১৯৯২ সালে শিল্প ব্যাংকের ম্যানেজার আব্দুর রশিদ প্রতারণার মাধ্যমে সিরাজুল ইসলাম মজুমদার ও আবুল খায়ের চৌধুরীকে খুলনা সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ২৮ বিঘা ১৮ শতক জমি ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই মূল মালিকের ওয়ারেশগণ শিল্প ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ৪ জনকে আসামি করে খুলনা সাবজজ আদালতে মামলা করেন, যেটি চলমান।
এ অবস্থায় ভুয়া দলিল করে নেওয়া আবুল খায়ের চৌধুরী ১৪ বিঘা ৯ শতক জমি আব্দুল হাই বাহারের কাছে বিক্রি করে। বাকি ১৪ বিঘা ৯ শতক জমি সিরাজুল ইসলাম মজুমদারের ওয়ারেশগণ মাহবুব ব্রাদার্সের কাছে বিক্রি করে। দলিল করার পর দিঘলিয়া উপজেলা ভূমি অফিস ওই তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তিতে কোনো মামলা মোকদ্দমা নেই বলে রিপোর্ট দাখিল করার পর সেই জমির নাম পত্তন করে খাজনাদি সম্পন্ন করে মাহবুব ব্রাদার্স। বর্তমান মামলাটি চলমান আছে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার অফিসে।
ওই জমি আমার বাবার কাছ থেকে সাবেক মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের পৌষ্যপুত্র যোগীপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদুর রহমান লিংকন মৌখিকভাবে উক্ত জমিতে সার রাখে এবং এ বাবদ প্রতি মাসে সে ভাড়া প্রদান করে এবং প্রতিবছর ঈদ ঈদুল আযহার সময় গরুর হাট করার জন্য লিখিতভাবে আমার বাবার কাছ থেকে চুক্তিপত্র করে।
গত সংসদ নির্বাচনের পর খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনের সহযোগিতায় মাহবুব ব্রাদার্স গত ২ মার্চ জমির ভেতরে থাকা সকল স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে রাতারাতি ক্ষমতার দাপটে দখল করে নেয়। জমির ওপর দৌলতপুর সহকারী জজ আদালত ৩ মার্চ ১৮ দিনের জন্য স্থিতিশীল বজায় রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আদালত ১০ জুন জমির উপর ৬ মাসের জন্য স্থিতিশীল বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এ আদেশের তোয়াক্কা না করে মাহবুব ব্রাদার্স তার ক্ষমতার দাপটে ২ মার্চ সকাল থেকে আমার বাবার জায়গার ওপর যা কিছু ছিল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে রাতারাতি ক্ষমতার দাপটে আশেপাশে সরকারি জমিও দখল করে নিয়ে সীমানা প্রাচীর দেয়।
তাৎক্ষণিকভাবে খান জাহান আলী থানার ওসির কাছে গেলে তিনি কোনো ধরনের সহযোগিতা না করে সরাসরি অবৈধ দখলদারীত্বে সহযোগিতা করে বলেও অভিযোগ করেন মোল্লা মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৪
এমআরএম/এমজে