ঢাকা: ‘আইসব্রেকার অফ নলেজ’ শীর্ষক উত্তর মেরু অভিযান সম্পন্ন করে রাশিয়ার মুরমান্সক বন্দরে নোঙর করেছে পরমাণু শক্তি চালিত আইসব্রেকার জাহাজ ‘বিজয়ের ৫০ বছর’। এই বাংলাদেশ একজন শিক্ষার্থী অংশ নেন৷ গত ২২ আগস্ট ১০ দিনের এ অভিযান সম্পন্ন হয়েছে।
রোকবার (২৫ আগস্ট) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রসাটমের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিভিন্ন দেশের ৭৮ জন প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাপূর্ণ তরুণ ও যুবক অভিযাত্রী নিয়ে জাহাজটি ১৩ আগস্ট উত্তর মেরু অভিযানের লক্ষ্যে একই বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। উত্তর মেরু অভিযান শেষ করে সূচনা পয়েন্টে পৌঁছুতে জাহাজটি মোট ২ হাজার ৯শ ৭৯ মাইল পথ অতিক্রম করে। ১৭ আগস্ট অভিযাত্রীরা উত্তর মেরুতে পৌঁছানোর পর নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা স্থাপন করেন।
এর আগে এই জাতীয় চারটি বিজ্ঞান ও শিক্ষামূলক অভিযান পরিচালনা করা হলেও পঞ্চম অভিযানটিতে প্রথমবারের মতো রাশিয়া ছাড়াও অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণের সুযোগ পান। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, তিউনিশিয়া, ক্যামেরুন, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, উজবেকিস্থানসহ অন্যান্য দেশের মোট ১৫ জনের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কৌশিক আহমেদ। চলতি বছরের শুরুর দিকে রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব উৎসবে এক কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তিনি এই বিরল এডভেঞ্চারে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হন।
নিজস্ব অভিজ্ঞতা ব্যাক্ত করে কৌশিক আহমেদ বলেন, উত্তর মেরু অভিযানটি ছিল সত্যিকারার্থেই অবিস্মরণীয় এক অভিজ্ঞতা। নর্থ সি-রুট এবং নিউক্লিয়ার আইস ব্রেকার স্বচক্ষে দেখা ছিল অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার। অসাধারণ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা ছাড়াও আর্কটিকের অস্পৃশ্য ও মনোরম সৌন্দর্য এবং বিরল মানসিক প্রশান্তি আমার স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে। আমাদের পৃথিবী এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে গভীরতর সম্পর্ক স্থাপনের একটি সুযোগ করে দিয়েছে এই অভিযানটি। আইস ব্রেকারে রসাটমের বেশ কয়েক জন মেধাবী ব্যক্তিত্বসহ অন্যান্য অনেক প্রতিভাবানদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে, যা আমাকে ভবিষ্যতের পথচলায় অনুপ্রানিত করবে।
অভিযানকালে অংশগ্রহণকারীদের নিউক্লিয়ার আইস ব্রেকারের গঠন এবং পরিচালন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেকচার সেশন, মাস্টার ক্লাস, বিজ্ঞান ভিত্তিক গেইমস, ফিল্ম শোসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম। প্রথমবারের মতো উত্তর মেরুতে অবস্থিত ফ্রান্স জোসেফল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পান অভিযাত্রীরা। আইসবার্গ, তিমি, সিন্ধু ঘোটকসহ বিরল প্রাণী ও উদ্ভিত বৈচিত্র্য নিজ চোখে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। উত্তর মেরুর হিমশীতল পরিবেশ অনুভব ছিল অংশগ্রহণকারীদের জন্য আলাদা এক ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। উদ্যোক্তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তরুণ ও যুবাদের ওপর একটি ডকুমেন্টারি সিরিজও তৈরি করেন।
এই উত্তর মেরু অভিযানের মূল উদ্যোক্তা পরমাণু শক্তি তথ্যকেন্দ্র নেটওয়ার্ক। অভিযানে সহায়তা করেছে রসাটম এবং রাশিয়ার একটি সংস্থা ‘এজনানিয়ে’। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞান ও পারমাণবিক প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে তোলা, প্রতিভাবান তরুণদের খুঁজে বের করে তাদের সুপ্ত প্রতিভাবে বিকাশে সহায়তা প্রদান। আগামী বছরেও অনুরুপ একটি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
রাশিয়াই বিশ্বে একমাত্র দেশ যাদের পরমাণু শক্তি চালিত আইস ব্রেকারের একটি বহর রয়েছে। এই বহরে বর্তমানে আইস ব্রেকারের সংখ্যা সাতটি। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত নর্থ সীরুটের অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত রসাটমের পরিকল্পনা ২০১৯ সালে রুশ সরকারের অনুমোদন লাভ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২৪
এসকে/এএটি