হবিগঞ্জ: খোয়াই নদীর বাঁধে অপরিকল্পিতভাবে সাড়ে ২১ কিলোমিটার জায়গা পাকা করা হয়েছে। এ কারণে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উুঁচ করতে চাইলে এসব রাস্তা মাটিচাপা পড়বে।
সম্প্রতি উজানের ঢলে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭৭ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠেছে। আর আধামিটার পানি বাড়লেই তলিয়ে যেতে পারে হবিগঞ্জ শহরের দোকানপাট ও বাসাবাড়ি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, এবার নদীতে পানির উচ্চতা ৩৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এখন শহরবাসীর নিরাপত্তায় বাঁধ উঁচু করা প্রয়োজন।
কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অপরিকল্পিতভাবে বাঁধের ওপর রাস্তা নির্মাণ করে রেখেছে বিধায় সেটি করা যাচ্ছে না। ভারী যান চলাচল করায় বাঁধের অনেক জায়গা অরক্ষিত হয়ে গেছে, ফলে ভাঙনের শঙ্কা আছে।
পাউবো কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বাঁধে রাস্তা নির্মাণ করে যান চলাচল করতে দেওয়া ক্ষতিকর। কোদাল অথবা মাটি কাটার কোনো যন্ত্র তো বাঁধে স্পর্শ করাও উচিত নয়। তারপরও হবিগঞ্জ শহরে গরুর বাজার থেকে গোপালপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার, মাছুলিয়া থেকে আছিপুর পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার ও কামড়াপুর থেকে শাহপুর পর্যন্ত আরও তিন কিলোমিটার খোয়াই বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে পাকা রাস্তা করেছে এলজিইডি।
চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নে খোয়াই বাঁধের ওপর আরও দুই কিলোমিটার এবং নবীগঞ্জে পারকুল থেকে বান্দের বাজার পর্যন্ত কালনী নদীর বাঁধে ১২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে। এলজিইডি পাউবোর সঙ্গে স্মারক সমঝোতা না করেই এ কাজগুলো করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খোয়াই নদীর বাঁধের ওপর গরুর বাজার থেকে গোপালপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় রাতদিন বালু বোঝাই ট্রাক্টর চলাচল করছে। ১৫ ফুট মূল বাঁধের দুপাশের অতিরিক্ত আরও ১০/১৫ ফুট জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে। বাঁধের ওপরেই অনেক সেচ প্রকল্পের স্থাপনা। কেটে নেওয়া হচ্ছে বাঁধের মাটিও।
পাউবোর এক কর্মকর্তা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, শুধু গরুর বাজার থেকে গোপালপুর পর্যন্ত বাঁধই নয়; হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট ও নবীগঞ্জ উপজেলায় খোয়াই এবং কুশিয়ারা নদীর বাঁধে একুশ কিলোমিটার পাকা রাস্তা। ভারী যান চলাচলের ফলে বাঁধগুলো দুর্বল হচ্ছে। ফলে বর্ষায় লোকালয় ও ফসলের মাঠ বন্যার ঝুঁকিতে পড়ে।
পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রেজা বাংলানিউজকে বলেন, হবিগঞ্জ শহর ও ফসলি জমি রক্ষায় ১১/১২ কিলোমিটার উচ্চতার খোয়াই বাঁধকে আরও অন্তত এক মিটার উঁচু করা প্রয়োজন। কিন্তু পাকা রাস্তা থাকার কারণে সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এলজিইডির বাঁধকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
এদিকে, অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করেছেন এলজিইডি হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের তদবিরে বাধ্য হয়ে রাস্তাগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ’
তবে পাউবোর আরেক কর্মকর্তা বলেন, শহর ও ফসলের মাঠ রক্ষায় কোটি টাকার রাস্তা নিয়ে ভাবলে চলবে না। হবিগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উঁচু করতেই হবে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে লিখিত চিঠি পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
আরএ