ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শিবচর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ ৯১ সাপেকাটা রোগী

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪
শিবচর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ ৯১ সাপেকাটা রোগী

মাদারীপুর: মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত তিন মাসে ৯২ জন সাপেকাটা রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ৯০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এক রোগীকে হাসপাতালে আনার পরপরই মারা যান।  

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ বেষ্টিত মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চরাঞ্চল ও নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় চলতি বছরের প্রথম থেকেই রাসেলস ভাইপার সাপের প্রকোপ দেখা দেয়।  

গত জুলাই মাসের ১ তারিখে পাটজাগ দিতে গিয়ে উপজেলার চরজানাজাত এলাকার কৃষক সুলতান বেপারী(৫২) রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। পরে দ্রুত তাকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্বজনেরা। পরে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে 'বিষধর' সাপের কামড় বলে নিশ্চিত হন।  

পরে তাৎক্ষণিক মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকেরা। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পর রোগী সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। সর্প দংশনের শিকার সুলতান বেপারী সুস্থ হয়ে উঠলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। এরপর থেকে শিবচর ও আশেপাশের এলাকার সাপের কামড়ে আহত রোগীরা আসতে শুরু করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এরপর গত ৭ জুলাই পদ্মা বেষ্টিত চরজানাজাত থেকে মমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বিষধর সাপের ছোবলে আক্রান্ত হন। পরে সাপসহ (রাসেলস ভাইপার) রোগীকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। একই দিন রাত ১টার দিকে উপজেলার বাঁশকান্দি এলাকা থেকে সাপের ছোবলে গুরুতর আহত সজীব হাওলাদার নামের এক যুবককে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। পরে তাদের অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে তারা উভয়ই সুস্থ হন। পরবর্তীতে আরও একাধিক রোগী অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ সুস্থ হয়ে উঠেন।

সুলতান বেপারীসহ একাধিক রোগী জানান, শিবচর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২/৩ দিনের মধ্যেই অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন। এখন সাপেকাটলেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চলে আসে আক্রান্তরা। আগে হাসপাতালে সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসা হয়, অনেকেই জানতো না। তাছাড়া আগে হাসপাতালে ততটা গুরুত্বও দিতো না। বর্তমানে গুরুত্বসহকারে রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপেকাটা ৯২ জন রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ১২ জন রোগী বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে ১১ জন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থা হাসপাতালে আনার পর একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অন্যদের ২/১ দিন পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।  

হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, নদ-নদী বেষ্টিত শিবচরে সাপের উপদ্রব বেশি থাকায় চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ অ্যান্টিভেনম রাখা হয়। সাপেকাটা আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে এখানেই সঠিক চিকিৎসা সম্ভব। তাছাড়া চরাঞ্চলের রোগী অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে সুস্থ হওয়ার পর সাপেকাটা অসংখ্য রোগী এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ফাতিমা মাহজাবিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে। শেষ হওয়ার আগেই আমরা চাহিদা দিয়ে থাকি। সাপেকাটা রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে যথাযথ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। ওঝার কাছে না গিয়ে যতদ্রুত সম্ভব শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিবচর হাসপাতালেই সাপেকাটা রোগীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।