ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গবেষণা খাতে আগ্রহ বাড়াতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৪
গবেষণা খাতে আগ্রহ বাড়াতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে

ঢাকা: গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তোলার জন্যও বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, গবেষণায় এখনও বৈষম্যমূলক বরাদ্দ বন্ধ হয়নি।

তাই প্রতিটি প্রকল্পের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঠিক করার ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা, কাজের ধরণ, অভিজ্ঞ জনবলের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান।

রোববার (০৩ নভেম্বর) রাজধানীর নীলক্ষেতে অবস্থিত জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমিতে (এনএপিডি) আয়োজিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট আয়োজিত ৯ম সম্মেলনে দেশ বরেণ্য গবেষকরা এ ঐকমত্য পোষণ করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশ বরেণ্য বিজ্ঞানী, পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবক ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানটা আমাদের চেতনায় তিরোহিত, আমাদের চেতনায় একদম বিজ্ঞান নাই। আমাদের ডক্টর কুদরত-ই-খুদা, প্রফেসর সালাম ফিজিক্সের কিছুটা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তিনি সামাজিক গবেষণার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন।

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক এবং বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আলম বলেন, গবেষণায় কিছু প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পাচ্ছে, আর কিছু প্রতিষ্ঠান একদমই পাচ্ছে না। এমন না যে, তাদের যোগ্যতার অভাব আছে। এক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তিনি।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দাবি করেন, গবেষণায় বরাদ্দ কম বা তারা পাচ্ছেন না। এ দাবিটিও যেমন সত্য, তেমন এটাও সত্য যে অনেক উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অলস পড়ে আছে। গবেষকরা গবেষণায় কম আগ্রহী। তাদের আগ্রহী করে তোলার জন্যও গবেষণায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ কাজে আসবে বলে মনে করেন ড. খুরশিদ।

রাষ্ট্রীয় দর্শনের ক্ষেত্রে ড. খুরশিদ আলম বলেন, ওয়ান বাংলাদেশ থেকে নাম্বার ওয়ান বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের গবেষণা বিশ্ব দরবারে সেরাদের কাতারে নিয়ে যেতে হবে।

চারটি থিমের সেশনগুলোতে, দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরিচালনা করেন। তাদের সামনেই নতুন প্রজন্মের গবেষকরা তাদের পেপার উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে মোট ২৮টি গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়। ৩০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অংশ নেন।

সম্মেলনে বাংলাদেশে জেন্ডার ও সামাজিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। জেন্ডার বিষয়ক সাতটি ও অর্থনীতি বিষয়ে তিনটি গবেষণা উপস্থাপিত হয়। একটি গবেষণাপত্রে বাংলাদেশের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়া-সম্পর্কিত কোর্সে প্রাতিষ্ঠানিক বাধাগুলোর আলোচনা করা হয়। এতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। অন্য একটি গবেষণায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছিন্নমূল শিশু ও শিশু শ্রমিকদের মানবেতর অবস্থার ওপর আলোকপাত করা হয়। দৌলতদিয়ার পতিতালয়ের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিশুদের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেসি প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে নতুন উপায় সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও, বিবাহ ও দেনমোহর লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তায় কেন্দ্রীয়ভাবে সব বিন্যাস সম্পন্ন করার মডেল উপস্থাপন করা হয়।

পরিবেশ সেশনে মোট নয়টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, যা মাইক্রোপ্লাস্টিক, শক্তি সংরক্ষণ সচেতনতা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পানীয় জলের প্রাপ্যতা, ল্যান্ডফিল সাইটের উপযুক্ততা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা করা হয়।

সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভোক্তা আচরণ এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কিত গবেষণা উপস্থাপন করা হয়েছে। চীনের বিনিয়োগ, ঋণের ফাঁদ সম্পর্কিত একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপিত হয়।

দেশের স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করে নয়টি পেপার উপস্থাপন করা হয়। একটি গুণগত গবেষণায় কুমিল্লার গার্মেন্ট সেক্টরের নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া খুলনা শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানের মূল্যায়ন করে গবেষণা উপস্থাপিত হয়। আরেকটি গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও খাদ্য নিরাপত্তার সংযোগ এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান অবস্থার সঙ্গে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৪
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।