এটি আদতে কোনো প্রতিবেদন নয়, বরং বাস্তবতা যা প্রতিনিয়ত রাজধানীর মানুষের চোখের সামনে দিয়ে ঘটে যাচ্ছে। তারপরও কারও বিবেক নাড়া দেয় না।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মিরপুর। দারুস সালাম সড়কটিও প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গমনাগমনের জন্য। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর এই সড়কেরও নানা কিছু পাল্টেছে। আগে যেমন শুধুমাত্র বাস ও লেগুনা, ব্যাটারি রিকশা চালকদের জন্য এই সড়ক স্থবির হয়ে থাকতো; এখন থাকে বাজারের কারণে।
প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দারুস সালাম সড়কটির টোলারবাগ এলাকাসংলগ্ন অংশে বাজার বসছে। রাস্তার বড় অংশ দখল করে বাজার চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। ছুটির দিনগুলোয় দুপুর ১২টা পর্যন্তও নাকি চলে।
রাস্তার ওপর ফড়িয়াদের বাজার থেকে কাঁচা শাক-সবজি, মাংস-মুরগি কেনেন অনেক ক্রেতা। কিন্তু তাদের মাথায় নেই দেশের রাস্তার ওপর এমনভাবে বাজার বসানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছে, কোনো স্থানে হাট-বাজার স্থাপন ও তার পরিসীমা সম্প্রসারণ বা সংকোচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিতে হবে। কেউ হাট-বাজার স্থাপনের জন্য সরকারি জমি-রাস্তাঘাট অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো অবৈধ অবস্থান নিতে পারবে না। এসব কিছু করলে দায়ী ব্যক্তিকে উচ্ছেদ-অপসারণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের জিনিসপত্র সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ ক্ষেত্রে দণ্ড দিতে পারবেন। মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচার কাজ চালাতে পারবেন।
দারুস সালাম সড়কটির টোলারবাগ এলাকাসংলগ্ন অংশে যারা বাজার বসিয়েছেন তারা এক প্রকার অপরাধ করছেন। তাহলে যারা এই অপরাধকে সহায়তা করছেন, তারা দোষী!
মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় বাজার রয়েছে। বিভিন্ন সময় ফড়িয়ারা এসব বাজারে অল্প একটু জায়গা নিয়ে নিজেদের ব্যবসা করে ফিরে যেত। গত ১৫ বছরে এসব জায়গা অর্থের বিনিময়ে দখলে নিয়েছিল কিছু ব্যবসায়ী। বাজার সম্প্রসারণ হতে হতে প্রথমে চলে আসে ফুটপাতে। পরে রাস্তায়। এসব পরিচালিত হতো তৎকালীন সরকারের এমপিদের গুন্ডাবাহিনীর আওতায়। সেই বাজার ছেড়ে বিভিন্ন ছোট-বড় বাহন চলাচলের রাস্তায় কেন এলো কাঁচা-বাজার?
সাধারণ চোখে দেখলে- সরকারের অসচেতনতা, শক্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, ফড়িয়াদের জন্য স্থান দিতে না পারা, পুলিশ ও ট্রাফিকের দায়িত্ব অবেহলা, রাজনৈতিক নেতাদের ডান হাত-বাঁ হাতদের চাঁদাবাজিসহ আরও অনেক কারণে রাস্তার ওপর ব্যবসা চলে এসেছে।
সকালে কাঁচাবাজার, বিকেলে খাবারের ব্যবসা এখন পুরোদমে রাস্তার ওপরেই চলছে। আর এর দায় সম্পূর্ণ পুলিশ ও ট্রাফিক ব্যবস্থার। এ কথা সাধারণ জনগণের। যাদের বিবেক বুদ্ধি এখনো লোপ পায়নি, যারা সরকারকে সমীহ করে চলেন। যারা নীতি ও আদর্শ মেনে জীবন পার করছেন তারাই পুলিশ ও ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর আঙুল তুলছেন। সমালোচনা করছেন সরকারের।
সত্তর বছর বয়সী ইউনুস হাওলাদার প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত হাঁটেন। আগে পার্কে বা গাছ-গাছালিতে ভরা এলাকায় হাঁটতেন। এখন এসব কমে যাওয়ায় হাঁটেন রাস্তার ফুটপাত দিয়ে। তাকে দেখে গিয়ে এগিয়ে কথা বলতে চাইলাম। রাস্তার ওপর বাজার বসার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, দিন পার হচ্ছে জনগণের মধ্যে একটা অলসতা বাড়ছে। তারা এখন তাদের ঘরের সামনে সব কিছু চায়। কিন্তু এটা তো হয় না। বাজার করার জন্য তাদের বাজারে যাওয়া উচিৎ। হাঁটা-চলায় তো শরীরও ঠিক থাকে।
সরকারেরও উচিৎ এসব অস্থায়ী বাজারওয়ালাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা। তা না হলে এরা রাস্তা দখল করবেই। পুলিশ বা ট্রাফিক তো এখন তেমন সক্রিয় না। সরকার পরিবর্তনের পর তাদের মধ্যে ভয় কাজ করে। কিসের ভয়? কেন ভয় পাবে? তারা তাদের কাজ করবে। কেউ না মানলে আইন কথা বলবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে কই?
সাইমুন মুমিন নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর বাসা টোলারবাগে। তিনি জানালেন, গত এক মাস ধরে তারা রাস্তার ওপর বাজার দেখছেন। প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ এই বাজার থেকে কেনা-কাটা করেন। কিন্তু তারা দেখেন না বাজারের কারণে পুরো রাস্তায় কীভাবে যানজট হচ্ছে। বাজারের জন্য নির্ধারিত স্থান আছে। রাস্তায় কেন বাজার হবে? ট্রাফিক-পুলিশ কি ঘুমিয়ে থাকে? তারা কি কিছু দেখে না? এভাবে একটা রাষ্ট্র চলতে পারে না। সরকারের দায় এখানে সবচেয়ে বড়। তা না হলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে না।
ট্রাফিক-পুলিশ কি ঘুমিয়ে থাকে? বিশাল বড় এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আদৌ কেউ জানে কিনা তাও জানি না। আগে সরকার দলীয় ব্যক্তিদের চাঁদাবাজির কারণে বাজার ও এ সংলগ্ন এলাকাগুলোয় ফড়িয়ারা কোনো স্থান পেত না। এখন তো আর সেই পরিস্থিতি নেই। সেই লোকজনও নেই। প্রশ্ন তো মনে অনেক, তাহলে কাদের কারণে রাস্তার অংশ দখল করে বাজার বসছে? কার অসেচনতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে? ট্রাফিক-পুলিশ কি আসলেই ঘুমিয়ে থাকে? উত্তর না হয় তাদের পক্ষ থেকে আসুক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এমজে