ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক গণঅবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করাসহ ১১ দফা দাবিতে এই গণঅবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন।

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করবেন না। এটা করা হলে সারাদেশে আগুন জ্বলে উঠবে। আপনারা (অটোরিকশাচালক) লড়াই করতে থাকেন। আইন সিদ্ধভাবে আমরা লড়াই করছি। এই লড়াই এগিয়ে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনব।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই দেশের খবরা-খবর রাখেন। কেউ কেউ বলতেছে আগে সংস্কার হবে তারপর ইলেকশন হবে। ঠিক আছে, আমি সেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কিন্তু আমি বলতে চাই, সংস্কার কি করবে না করবে সেটা পরের বিষয়। কিন্তু আমার রিকশা শ্রমিকের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটাকে প্রত্যাহার করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত আগামীকাল কোর্টে হোক বা না হোক— আজকে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর যদি এটা না হয় তাহলে আমি বলছি, তারা যেমন বলে, সংস্কার না করে নির্বাচন দেব না; ঠিক তেমনি রিকশাচালকের দাবি না মেনে গদিতেও তুমি থাকতে পারবা না।

তিনি আরো বলেন, গত জুলাই আগস্ট মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আপনারা ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থান দেখেছেন, কিন্তু শ্রমিকদের গণঅভ্যুত্থান দেখেননি। তারা সমস্ত শোষকের বারোটা বাজিয়ে দেবে। পাড়ায় পাড়ায় কমিটি বানান, শ্রমিকদের সংগঠন গড়ে তোলেন। রিকশা ড্রাইভার, গার্মেন্টসের শ্রমিক ও ক্ষেত মজুররা অর্থাৎ যারা মেহনত করে খায় তাদের সকলের কাছে খবর পৌঁছায় দেন। এর সরকার, তার সরকার, ওর সরকার কত সরকার দেখেছি— আগামী দিনে ইনশাল্লাহ গরিব মানুষের সরকার হবে। ডিসি, এসপি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মিলিটারি অফিসার, জোয়ান, পুলিশ বাহিনী সবাই হবে এই সংগ্রামের সৈনিক। তাদের ভেতর থেকেই আমরা এই রাষ্ট্রকে গড়ে তুলব। কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না।

ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, আমি ডাকসুর ভিপি ছিলাম। আপনারা কেউ রিকশাচালকদের সঙ্গে বেয়াদবি করবেন না। আপনার বাবার বয়সী রিকশা চালককে তুই তোকারি করে কথা বলা চলবে না। মেহনতি মানুষকে মর্যাদা দিতে শেখেন। যারা পরিশ্রম করে দেশকে গড়ে তুলেছে, তাদেরকে সম্মান জানানো। ভুলে যাবেন না, এই গণঅভ্যুত্থান একজন লোকের তৈরি না। এটা হলো সমস্ত ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান। সেখানে রিকশাওয়ালা রক্ত আছে, গার্মেন্টস শ্রমিকের রক্ত আছে। বৈষম্যবিরোধীর কথা বলে মধ্যবিত্তের রাজত্ব কায়েম করলে বৈষম্য দূর হবে না। আপনাদের কথায় ও কাজের মিল আছে কিনা, সেই প্রমাণ আমরা দেখতে চাই। কোন ছাত্র যদি রিকশাওয়ালার প্রতি অবিচার করে— যেভাবে আমরা হাসিনার গুন্ডাবাহিনীকে নিবৃত করেছি, একইভাবে তাদেরকেও আমরা নিবৃত রাখার জন্য আপ্রাণ ব্যবস্থা করব।

গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রতন বলেন, একজন বিচারপতির মৃত্যুবরণে আজকে রায় হবে না। আমাদেরকে তারা বলেছেন, আগামীকাল তারা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ডিএমপি থেকে বলা হয়েছে কোন রাস্তায় কীভাবে চলা যাবে তা জানাবে। চালকদের উদ্দেশ্যে আমরা এটাও বলতে চাই, নিয়ম মেনে রিকশা চালাতে হবে। লেন মেনে চালাতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ম মেনে গাড়ি (রিকশা) চালাতে হবে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় ‘রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন’র ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়কে গণঅবস্থান নেন অটোরিকশা চালকরা। ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করাসহ ১১ দফা দাবিতে এই গণঅবস্থানের আয়োজন করা হয়।

কয়েক হাজার অটোরিকশাচালকদের এই অবস্থানের কারণে পল্টন থেকে কদম ফোয়ারা মোড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে চলে যান।

তাদের ১১ দফা দাবি হলো- দেশের সড়ক উপযোগী নকশায় আধুনিকায়নসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ লাইসেন্স ও যৌক্তিক রুট পারমিট দিতে হবে; চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে; ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা কমিটি গঠন করতে হবে; সড়কের লেন পদ্ধতি সচল ও সার্ভিস লেন নির্মাণ করতে হবে; আন্দোলনে আটক ও গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে; ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে গণপরিবহন ও শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে; জব্দ করা সকল ব্যাটারিচালিত যানবাহন ও ব্যাটারি মালিকের কাছে হস্তান্তর ও নিলামকৃত ব্যাটারির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে; চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে; মানবিক বিবেচনায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের পুঁজিকে নিরাপদ করে পর্যায়ক্রমে প্যাডেলচালিত বাহনের শ্রম থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে এবং শ্রমিকদের ওপর সকল জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি-হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।