সাভার, (ঢাকা): ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এই দিনে ৩০ লাখ শ্রেষ্ঠ সন্তানের জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে বাঙালি জাতি।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে সাভারের নবীনগরে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা যায়, বিজয়ের লাল ও সবুজ ফুলে সুশোভিত করে তোলা হয়েছে গোটা সৌধ প্রাঙ্গণ। রং তুলির আঁচড়ে পুরো জাতীয় স্মৃতিসৌধ সেজেছে বিজয়ের সাজে। শ্রদ্ধায় সিক্ত করতে ধুয়ে মুছে ঝকঝকে করা হয়েছে শহীদ বেদিসহ জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সম্পন্ন করা হয়েছে আলোকসজ্জাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্য মতে, বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রথম শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা। পর্যায়ক্রমে বিদেশি কুটনৈতিক, রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনসহ বিজয়ী লাখো জনতা জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এই লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শ্রদ্ধা নিবেদনে জাতীয় সৌধ প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করে তুলতে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্তৃপক্ষ।
৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধে সব ধরনের দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ সময়ের মধ্যেই অর্ধশতাধিক কর্মী বিজয়ের রং আর ফুলে ফুলে সুশোভিত করে তোলে বাঙালির আবেগের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করেন আব্দুল মান্নান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। জাতীয় স্মৃতিসৌধ হলো বাঙালির আবেগের স্থান, স্বাধীনতা অনুভবের স্থান। এখানেই শায়িত আছেন জাতিকে মুক্তি এনে দেওয়া শহীদরা। আমি তাদের খেদমতে কাজ করি। যা সবার ভাগ্যে এমন সুযোগ জোটে না। আমি গত দুই সপ্তাহ ধরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। আজ শ্রদ্ধা নিবেদনে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি প্রস্তুত। আমি জাতীয় স্মৃতিসৌধে কাজ করতে পেরে গর্বিত।
রং ও তুলির আঁচড়ে বিজয়ের সাজে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাজিয়ে তুলেছেন আল-আমিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানেই কাজ করি। আমার কাজ হলো রং ও তুলি দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাজানো। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমি এই কাজ করেছি। জাতির বীর সন্তানদের জীবনের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে সৌধ প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করার কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই আপ্লুত। আমি বাকি জীবনটা যেন শহীদের খেদমতে কাটিয়ে দিতে পারি।
কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকলেও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ১০৮ একর জায়গাজুড়েই জোরদার করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থান। ইতোমধ্যেই সৌধ প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের উপ মহাপরিচালক (ডিআইজি) একেএম আওলাদ হোসেন।
তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশেপাশে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুধু সৌধ এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর মেট্রো নিরাপত্তার বলয়ে চলে আসবে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে তিন হাজারের পুলিশের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় করা হয়েছে। ১১টি সেক্টরে কাজ করছে পুলিশ। সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে বিজয় দিবস ঘিরে কোনো ধরনের ঝুঁকি বা হুমকি নেই।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ ও গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা, বিদেশি কুটনৈতিক শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আমরা ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত করছি। জাতীয় স্মৃতিসৌধ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১০৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই সৌধে প্রতি বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবদেন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
এএটি