ঢাকা: রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ, মনোনয়ন বাণিজ্য ও নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহার বন্ধে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পেশ করেছে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকদের সংসদ সদস্য নির্বাচনে বাধা তুলে দিয়ে প্রবাসীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনের প্রস্তাবও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে।
সম্প্রতি কয়েক দফা কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ প্রস্তাবনাগুলো তৈরি করা হয়।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ দ্বারা সংস্কার প্রস্তাব দাখিল ও সংস্কার পর্যালোচনাভিত্তিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আ ম মো. সাঈদ, আইন বিভাগের প্রভাষক সিফাত হোসেন, আইন বিভাগের প্রভাষক মেহেনাজ বিনতে আমিন এবং আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
প্রথম পর্বের নির্বাচন সংস্কার প্রস্তাব এর ওপর পর্যালোচনাভিত্তিক সভা অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সভা রুমে। সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। সভায় নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক বিশদ আলোচনা করা হয়।
আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আ ম সাঈদ বলেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের এক শতাংশ হারের শর্তটি বাতিল করা যুক্তিযুক্ত।
অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জনগণের মতামত ও ইচ্ছার প্রতিফলনের আলোকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার হওয়া উচিত মর্মে মতামত ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও প্রার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, দ্বৈত নাগরিকত্ব, প্রবাসীদের ভোট, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা ইত্যাদি বিষয় ও উঠে আসে।
দ্বিতীয় পর্বে সংবিধান সংস্কার কমিশনে এককেন্দ্রিক সরকারের পরিবর্তে ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ স্থানীয় সরকার ক্ষমতায়ন ও রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে জনগণের সর্বোচ্চ ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কয়েক দফা সংস্কার প্রস্তাবনা কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়।
দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা
সংবিধানের ৬৬(২) (গ) উপধারায় দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা অংশটি রোহিত করে প্রস্তাবিত সংশোধননীতিতে বলা হয়, যেহেতু দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং কয়েক মিলিয়ন প্রবাসী দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে ও শাসন ক্ষমতায় তাদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করণে সংসদ সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বকে অযোগ্যতা ঘোষণার শর্তটি রহিত করা যেতে পারে। যেহেতু প্রবাসী কিংবা দ্বৈত নাগরিকরা ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন, সেহেতু তারা নির্বাচিত হইবারও অধিকার রাখেন। বিশ্বের যে দেশগুলো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয় লেবানন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি। তবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বে পরিহারের শর্ত যোগ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
আরআইএস