ঢাকা, বুধবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাস্তায় ফেলে যাওয়া মায়ের ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৫
রাস্তায় ফেলে যাওয়া মায়ের ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে এই নারীকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় স্বজনরা।

নীলফামারী: শরীরে প্রচণ্ড জ্বর। রাস্তার ধারে পড়ে শীতে কাঁপছিলেন তিনি।

শরীরের এক সাইডে প্যারালাইসড তাই চলাচলও করতে পারেন না। সকাল থেকে রাস্তার ধারে পড়েছিলেন। দুপুরেও একই অবস্থা দেখে এলাকাবাসী বুঝতে পারেন-হয়তো কেউ ফেলে দিয়ে গেছে এই অসহায় মাকে।  

কনকনে শীতের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ওই অসহায় মাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছেন তারই আপনজনরা। পরে সমাজসেবক ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় অসহায় ওই মায়ের জায়গা হয়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমের কর্ণধার সাজেদুর রহমান সাজু নিজেই উপস্থিত হয়ে ওই মাকে নিয়ে যান।  

রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতেই তাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়। ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধা মায়ের নাম রেহানা খাতুন (৫৯)। তার বাসা সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ী এলাকায়।

রোববার সকালে সবার অজান্তে সেই বৃদ্ধা মাকে শহরের উপকণ্ঠে কামারপুকুরের নতুন ডাঙ্গা পাড়ায় রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যায় তার আপনজনরা। ওই এলাকার রাসেল, খোরশেদ সকাল থেকে ওই মায়ের দেখাশুনা করছিলেন। পরে স্বেচ্ছাসেবক সাংবাদিক নওশাদ আনসারী ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয় ওই মায়ের। রাতেই বৃদ্ধাশ্রমের কর্ণধার সাজেদুর রহমান সাজু মাইক্রোবাস নিয়ে এসে ওই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যান।

ওই এলাকার খোরশেদ আলম জানান, সকাল থেকে রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই মাকে। রোগাক্রান্ত হওয়ায় তিনি হাঁটাচলাও করতে পারছিলেন না। চা পানি নাস্তা দিলেও খেতে চাচ্ছিলেন না। তাকে কে বা কারা ফেলে দিয়ে গেছে। পরে এলাকাবাসী ও স্বেচ্ছাসেবক সাংবাদিক নওশাদ আনসারীর মাধ্যমে উনাকে নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবক নওশাদ আনসারী ও রাসেল আহমেদ জানান, ওই বৃদ্ধা মায়ের ব্যাপারে খোঁজ নিলে জানা যায়, তার এক ছেলে ছিল সে মারা গেছে। পরে ছেলের বউয়ের অন্যত্র বিয়ে হলে অসহায় হয়ে পড়েন এই মা। তাছাড়া তিনি রোগাক্রান্ত হওয়ায় হয়তো তার কোনো আপনজনই রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যায়। পরে মানবসেবক নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের সাজু ভাইকে অবগত করলে তিনি সাদরে ওই মাকে গ্রহন করেন এবং নিজেই মাইক্রোবাস নিয়ে এসে ওই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যান।

নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের কর্ণধার সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, ওই এলাকা থেকে খবর পাই যে কোনো এক বৃদ্ধা মাকে কেউ রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে। পরে সৈয়দপুরে স্বেচ্ছাসেবক সাংবাদিক নওশাদ আনসারী এবং ওই এলাকার খোরশেদ আলম, রাসেল ভাইয়ের সহযোগিতায় আমার বৃদ্ধাশ্রমের দুই সহকর্মী রাফিয়া আক্তার, রতন রায়কে সঙ্গে নিয়ে রাতেই তাকে আমাদের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসি।

আমাদের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রম যতদিন থাকবে, আমি যতদিন থাকবো ততদিন কোনো অসহায় বৃদ্ধা মা-বাবা রাস্তায় পড়ে থাকবে না। আমার নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে অসহায় মা-বাবাদের জন্য সব সময় খোলা বলে জানান মানবিক সাজেদুর রহমান সাজু।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।