ঢাকা: বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের বেতন নিয়ে যে অসন্তোষ চলছে সেটি নিরসনে কোম্পানিটির সম্পদ জব্দ করার কথা বলেছেন আর্থিক খাত বিশ্লেষক মামুন রশীদ।
তিনি বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের বেতন নিয়ে যে অসন্তোষ চলছে প্রয়োজনে কোম্পানির অন্যান্য সম্পদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ অধিগ্রহণ করে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর বিএফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন আর্থিক খাত বিশ্লেষক মামুন রশীদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মামুন রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগ শাসন আমলে অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হলেও সৌদি আরবের আরামকো, কোরিয়ার স্যামসাং ও আমাজন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেনি। ডলার সংকটের কারণে ইত্তেহাদ ও ফেসবুকও তাদের বিনিয়োগ সংকোচন করেছে। বিদেশে রোড-শো করে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যায় না। বিগত সরকারের সময় রোড-শোর নামে আমলা ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশির্বাদপুষ্টরা বিদেশে আনন্দ ভ্রমণ করেছে। এসব শোর নামে অনৈতিকভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এসব রোড-শো করেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের মাধ্যমে সৎ, যোগ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব দিতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণ, আমলাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতাও পরিহার জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডলার সংকট, উচ্চ সুদহার, অধিক শুল্ক দুর্নীতি, অর্থপাচার, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি, জ্বালানি সংকট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা কারণে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে তাদের মুনাফা, লভ্যাংশ ও পুঁজি ফেরত নিতে পদে পদে হয়রানি, ঘুষ ও দুর্নীতির শিকার হয়। ফলে তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না।
তিনি বলেন, জিডিপির মিথ্যা পরিসংখ্যান, উন্নয়নের মিথ্যা গল্প, সুশাসনে ঘাটতি থাকলে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বাধাগ্রস্ত হয়। বিদেশিরা তখন দেশের বিনিয়োগ কাঠামোকে বিশ্বাস করতে চায় না। ফলে তারা বিনিয়োগ নিরাপত্তা না পেয়ে বাংলাদেশে না এসে মালয়েশিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোয় বিনিয়োগ করছে। যা আমাদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। কিছুদিন আগে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের কাছে কয়েকজন শিল্পপতি চোখের পানি ফেলে বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা চাঁদা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে গেছি। চাঁদাবাজদের হাত থেকে আমাদের বাঁচান।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান বাধা’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সমান নম্বর পেয়ে যৌথভাবে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস. এম. মোর্শেদ, বাবু কামরুজ্জামান সাংবাদিক ইকবাল আহসান ও সাংবাদিক আবুল কাশেম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
এমএমআই/এমজে