ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

শেবাচিমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি অকেজো, ভোগান্তি চরমে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
শেবাচিমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি অকেজো, ভোগান্তি চরমে

বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সরকারি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্র থাকলেও তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক যন্ত্রপাতিই অকেজো অবস্থায় রয়েছে।

যার কারণে সরকারিভাবে শতভাগ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

ফলে রোগীদের সরকারি হাসপাতালের গিয়েও বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়; আর এতে খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীদের নানা ভোগান্তিও পোহাতে হয়।

একই অবস্থা বিরাজ করছে শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালেও। সেখানে রক্ত পরীক্ষার জন্য আনা অ্যানালাইজার যন্ত্র ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্যাকেট বন্দিই পড়ে আছে। এছাড়াও বিভিন্ন যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

শেবাচিম সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের তিনটি সিটি স্ক্যানের মধ্যে শুধু একটি চালু আছে। আরেকটি একেবারে চলাচলের অচল এবং অপরটি মেরামতের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া এনজিওগ্রামের একটি যন্ত্র অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

অপরদিকে মেরামত করা সম্ভব নয় ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার কোবাল্ট-৬০ যন্ত্রটিও। সে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এমআরই মেশিন ২০১৮ সালের পর থেকে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া গত ৬ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অত্যাধুনিক ল্যাসিক যন্ত্রটিও। চোখের ছানি অপারেশনের ফ্যাকো যন্ত্রটিও বিকল হয়ে পড়ে আছে।

রোগীর স্বজন কামরুল ইসলাম বলেন, ভাইয়ের ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সিটি স্ক্যান করাতে বলেছে চিকিৎসক কিন্তু হাসপাতালে সম্ভব নয় দেখে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। তাও আবার ট্রলিতে করে প্রধান সড়ক ধরে হাসপাতালের সামনে নিয়ে যেতে হবে। এতে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে কিন্তু কিছু করার নেই।

ফাতেহা খানুন নামে অপর এক রোগী বলেন, গত ৬ মাস ধরে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছি। ল্যাসিক যন্ত্র বিকল থাকায় চোখের চিকিৎসা করাতে পারছি না। আর বাইরে করানোর সাধ্য আমার নেই।

জানা গেছে, কাগজে-কলমে দেড় হাজার শয্যার হলেও এক হাজার শয্যার লোকবল দিয়ে চলছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলটি। আর এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়।  এছাড়াও বহির্বিভাগেও প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীকে ব্যবস্থাপত্র নেওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়।

আবুল কালাম নামে নগরের এক বাসিন্দা বলেন, হাসপাতালের ভেতর থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যে টাকা খরচ হয় বাইরে প্রায় এর দ্বিগুণ খরচ হয়। আমরা চাই শেবাচিম হাসপাতালের ভেতরে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হোক। আর এ কাজ বিগত দিনে কোন পরিচালক সব মেশিন সচল রাখতে পারেননি। আবার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের স্টাফদের অদক্ষতার কারণেও মেশিন বিকল হয়ে পড়তো। তবে এবার মানুষ নতুন পরিচালককে নিয়ে অনেক আশাবাদী।  আশাকরি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেবাচিম হাসপাতাল ভালোর দিকে যাবে।

সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, আপাতত হাসপাতালের ল্যাবের যাবতীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ ও রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি আধুনিকায়নের কাজ করা হচ্ছে।  আশা করি আগামী দুই মাসের মধ্যে ল্যাবের কোনো পরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে হবে না। অন্যান্য যন্ত্রপাতির জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।  এরইমধ্যে তিনটি যন্ত্র বরাদ্দ হয়েছে। তবে এমআরই ও কোবাল্ট-৬ যন্ত্র দুইটির বিষয়ে এখনই কিছু করা যাবে না। অন্যান্য যন্ত্রের সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।

এদিকে বরিশাল নগরের পূর্ব ও উত্তরাংশের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বরিশাল সদর হাসপাতাল। একশ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে এবং বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে। কিন্তু এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রই নেই, যা আছে তার মধ্যে কিছু অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, হাসপাতালের অ্যানালাইজার মেশিনটি ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্যাকেট বন্দি রয়েছে। যারা সরবরাহ করেছের তারা চালু করে না দেওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কিছু করতে পারছে না।  তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য সিএমএইচডির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, শিশু ব্যতিত জেলায় ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত সব রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাই এখানে একটি ইলেকট্রোলাইট যন্ত্রটি খুবই জরুরি। কিন্তু এ যন্ত্রটি হাসপাতালে নেই। তবে যন্ত্রটির চাহিদা পাঠানো হয়েছে।  এছাড়া হাসপাতালে দুইটি এক্সরে মেশিন নষ্ট। এ দুটো মেরামত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আর সীমিত সামর্থ্যে দিয়েই সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে; তবে প্রয়োজনীয় যন্ত্র পেলে আরও ভালো সেবা দেওয়া যেতো বলে জানান চিকিৎসরা। আর হাসপাতালটিতে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেওয়ার দাবি জানান রোগী ও তাদের স্বজনরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
এমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।