ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

খাদ্য অফিসের কর্মচারীদের সহযোগিতায় চাল-আটা কালো বাজারে বিক্রি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
খাদ্য অফিসের কর্মচারীদের সহযোগিতায় চাল-আটা কালো বাজারে বিক্রি

টাঙ্গাইলে খাদ্য অফিসের কর্মচারীদের সহযোগিতায় চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলার পলাশ আল মাসুদের বিরুদ্ধে।  

এ প্রতিবেদক সতত্যা যাচাইয়ে মাঠে নামলে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শহরের আদালতপাড়া কেয়া হলের মোড়ের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তার প্রমাণও পেয়েছেন।

বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে হুনুফা বেগম নামে এক নারী আটার জন্য গেলে তাকে না করে দেওয়া হয়। আবার ১১টা ৪০ মিনিটে শহরের আদালত পাড়া এলাকার ষাটোর্ধ্ব সোনা মিয়া আটার জন্য ডিলার পলাশের বিক্রয়কেন্দ্রে যান। সেখানে ১৪ বস্তা আটা থাকার পরও বিক্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেন তাকে ঘুরিয়ে দেন।  

ইসমাইল হোসেন বলেন, আজকে চাল-আটা শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল ৯টার পরে আসবেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তাদের ওপরে চড়াও হন ইসমাইল হোসেন।

সোনা মিয়া বলেন, প্রথম আটা দিতে অস্বীকার করলেও পরে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমি আটা পেয়েছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই বিক্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকায় মির্জাপুরে সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক মো. সোহেল রানা ও সদর উপজেলার নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেনের সহযোগিতায় ডিলার পলাশ আল মাসুদের বিক্রয়কর্মীরা কালোবাজারে চাল-আটা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিক্রয় খাতায় ক্রেতাদের স্বাক্ষর নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ডিলারের কালো বাজারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কথিত নাম উল্লেখ করে নিজেরাই টিপসই দেন।

আদালত পাড়ার রিকশাচালক আয়নাল মিয়া বলেন, গত তিন মাসে দুইবার আটার জন্য গিয়ে ডিলার মাসুদের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে এসেছি। ঘরে চাল-আটা থাকলেও তারা না করে দিয়ে সেগুলো কালো বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এই অনিয়ম বন্ধে খাদ্য অফিসের যারা তদারকি করে থাকেন, তারাই কালোবাজারে চাল-আটা বিক্রি করতে সহযোগিতা করেন।

নাসিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাল-আটা পাই না। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লাইনে না থেকেও আটা সংগ্রহ করেন। সরকার আমাদের জন্য ন্যায্য মূল্যে চাল-আটার ব্যবস্থা করলেও সেগুলো আমাদের ভাগ্যে জুটে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, এই ডিলার পলাশ আল মাসুদ আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আগে কালো বাজারি করতেন। এখন খাদ্য অফিসের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে কালো বাজারি করছেন। এই ডিলার প্রতিদিন ২০ বস্তা আটা বরাদ্দ পেলেও সর্বোচ্চ ৮ বস্তা বিক্রি করেন। বাকি সব মিল থেকে বিক্রি করে চলে আসেন। যারা ব্যবস্থা নেবে তারাই তো জড়িত।

বিক্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আজাদ খন্দকার বলেন, আমরা কালোবাজারে চাল-আটা বিক্রি করি না। পরে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে কয়েকবার ফোন করেন তিনি।

খাদ্য অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি ডিলারের লোক না। প্রথমে আটা নাই বললেও পরে তাদের আটা তো দিয়েছি।

মির্জাপুরে সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেন, আমি আজ দায়িত্বে ছিলাম না। ইসমাইল দায়িত্বে ছিলেন। আমি কালোবাজারের সঙ্গে জড়িত না। পরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাদা বসে কথা বলার অফার করেন সোহেল রানা।

সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা শেখ মো. মুসা বলেন, আটা থাকতে না করার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।