ঢাকা, বুধবার, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উজ্জীবিত হয়ে ফিরছেন জেলা প্রশাসকরা, লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
উজ্জীবিত হয়ে ফিরছেন জেলা প্রশাসকরা, লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন কথা বলছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।

ঢাকা: মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে শেষ হলো তিন দিনের ডিসি সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুন্থানের পর নতুন সরকার আসায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে উজ্জীবিত হয়ে জেলায় ফিরবেন তারা।

পাশাপাশি তারা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার নির্দেশনা নিয়ে যাচ্ছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের এই ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করে। উদ্বোধী পর্ব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে হওয়ার পর মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনগুলো সচিবালয়ের পাশে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।  

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সমাপনী দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্পর্কিত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সমাপনী হয় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনে।

ডিসি সম্মেলন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।

মূল্যায়ন নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং অফিসার, ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সিটি করপোরেশনে বিভাগীয় কমিশনার রিটার্নিং অফিসার। তারা বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। এই প্রশিক্ষণের যোগানদাতা হলো জনপ্রশাসন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।  

এবার যেটা ডিজায়ার করা হয়েছে তাদের গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণগুলো যাতে আরও বেশি ইফেক্টিভ, দক্ষ এবং সাহসী হয়। যে নির্দেশনা দেওয়া হবে কাজে এবং কথায় যেন দ্বিমত না থাকে। ঠিক এভাবে তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে, প্রস্তুত করা হবে। নির্বাচন নির্ধারিত সময় যখন হবে তারা যেন ফ্রি-ফেয়ার, আমার ভোট আমি দেবো- এই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এজন্য তাদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আমাদের মাঠে যেসব ডিসি সাহেবরা আছেন, এরা ৫ আগস্টের পরে। এটা এমন একটা সিস্টেম বা প্রসেস এখন কিন্তু আমরা ডিসি ফিট লিস্টের কাজ শুরু করেছি। উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি সেটাও কাজ শুরু হয়েছে। এসএসবির মাধ্যমে যেগুলো হয় সেগুলোও চলছে। এগুলো এখন স্বাভাবিক, চলমান প্রক্রিয়া। অনেকের যে আন্দোলন বা অনেকের যে দাবি নানান ধরনের এক্সপ্রেশন এখন কিন্তু প্রশমিত।

ডিসি সম্মেলনে ডিসিদের প্রাপ্তি নিয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আমরা এক কথায় বলতে পারি তারা মোটিভেটেড। তাদের কিছু ফাংশনাল ডিউটি আছে সেই কাজগুলো তারা স্ব উদ্যোগে আগের চেয়ে আরও উৎসাহের সাথে জনস্বার্থে জনগণকে নিয়ে কাজ করবে। আজকে একটা মেলবন্ধন হয়েছে। এখানে কোনো দাবি উঠেছে বা দাবি পূরণ হয় নাই এরকম কিছু হয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং মাঠ প্রশাসনের সাথে অন্যান্য বিভাগের সমন্বয়ের বিষয়টি জোর দেওয়া হয়েছে এবারের সম্মেলনে।

ডিসিদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন একটা বার্ষিক অনুষ্ঠান। এটা প্রতিবছরই করার চেষ্টা করা হয়। গতবার মার্চে হয়েছে এবার ফেব্রুয়ারি। রমজানের কারণে সময়টাকে ভেবে আগে করা হয়েছে। একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার। আগস্টের প্রথম প্রশাসনযন্ত্র প্রায় ভেঙে পড়েছিল। মাঠ প্রশাসন কিন্তু তাদের অধ্যবসায় দেখিয়েছে। টিকে থাকার যে শক্তি সেটা দেখিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ক্ষতির শিকার হয়ে কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে ছিল। প্রশাসন পলাতক, এই কথা বলার মতো অবস্থা হয়নি। যদিও আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের অনেককে দেখেছি তারা অনেকেই নিখোঁজ ছিল বা তারা সামনে ছিল না। মাঠ প্রশাসন একটা কষ্টকর অবস্থায় ছিল, বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল, তাদের মনবলেরও কিছু ঘাটতি হয়ে গিয়েছিল। মাঠ প্রশাসনের বড় সহযোগী শক্তি পুলিশ, তাদেরও আপনারা দেখেছেন তারা পুরো মাত্রায় সক্রিয় ছিল না। এই কাজগুলো তারা এখন ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেগুলো আমরা একসাথে করিয়ে দিতে পারলাম।

‘আমরা একটা মেসেজ দিয়েছি, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে সেই চ্যানেল যেন মোকাবিলা করতে পারি সেটায় যেন তারা প্রস্তুত হতে পারে। ’

সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনকে আপনারা কতটা সমন্বয় করতে পেরেছেন- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকার তো একা একা চলে না। সবাই মিলে সরকার। সব বিভাগের সঙ্গে আমরা এখানে মুখোমুখি করিয়ে দিতে পেরেছি। আলোচনা হয়েছে। তাদের সমস্যা কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিভাগগুলো দেখেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি বা বিভাগগুলো আছে তাদের প্রত্যাশাও ডিসিদের দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এই যে মিল-মিস এটাই আমাদের টার্গেট ছিল। এ টার্গেটে কি রেজাল্ট হলো, এই রেজাল্ট তো অংক দিয়ে বলা যাবে না। আশা করি, রেজাল্ট আমরা পাব। তাদের কাজকর্ম আরও সুসংহত হবে আরও দক্ষতার সাথে তারা কাজ করতে পারবেন।

ডিসিদের কোনো বিষয়টাকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছেন, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এরকম নাটকীয় কিছু না। তবে তারা যে একটা বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে, দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন সেটাকে আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি, রিকোগনাইজ করেছি। সব মন্ত্রণালয় সম্পর্কে বোঝাতে পেরেছি। আমরা আশা করছি, তারা আরও উজ্জীবিত হয়ে চলে যেতে পারবেন।  

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সারাদেশ কিন্তু নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো ঘোষণা পায়নি। সরকার সেটা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। ঘোষণার পর যেন সময় না লাগে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সেটা তাদের বলেছি।  

প্রশাসনের মধ্যে একটা আন্দোলন ছিল, ডিসি হওয়ার জন্য, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিসি নিয়োগের আমাদের একটাতো প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া নিয়ে কারো কারো মনে সন্দেহ বা দ্বিধা-সংশয় ছিল। সেটা অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যত সময় হাতে পেয়েছি তত নির্ভুল বা বিতর্কমুক্ত নিয়োগ দিতে পেরেছি। সেই প্রক্রিয়া যে এখন শেষ হয়ে গেছে তা না, এটা চলতেই থাকবে। আমরা বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

গতবার চার দিন হলেও এবার তিন হওয়ায় চাপ বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিছু শিক্ষাও আমাদের হলো। যেমন উপদেষ্টার সংখ্যা কম মন্ত্রীদের পদমর্যাদায় যারা আছেন, ভেবেছিলাম আমরা তিন দিনের শেষ করে দিতে পারব তো খুব হ্যাটট্রিক হয়ে গেছে। আমরা যেন তিন দিন না করি চার দিনে করার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।