ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

রাজনীতি

হঠাৎ গরম হচ্ছে রাজপথ

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
হঠাৎ গরম হচ্ছে রাজপথ ফাইল ছবি

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের পর আবারো গরম হচ্ছে দেশের রাজপথ। সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনাসহ বেশ কিছু ইস্যুতে সারা দেশে প্রতিদিনই চলছে মিছিল-সমাবেশ।

এসব সভা-সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শক্তির জানান দিচ্ছেন।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি সারা দেশের জেলায় জেলায় জনসমাবেশ করছে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে আনা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত বন্ধ করা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী দলটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে সারা দেশের মহানগর জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।

বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সকল জেলায় জেলায় চলছে সমাবেশ। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এসব সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে জনমত গঠন করছেন।

তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার যশোরের টাউনহল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি সরকারে থাকার খায়েশ জাগে তাহলে পদ ছেড়ে নির্বাচনে আসুন। সরকারের বাইরে গিয়ে নতুন দল করুন আপত্তি নেই। কিন্তু সরকারে থেকে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না। আগে জাতীয় নির্বাচন দিন, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কোনোভাবেই আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিএনপি মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিএনপিকে ভাঙার বহু চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। বিএনপি জনগণের দল। এ কারণে গত ১৭ বছর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। তার চূড়ান্ত বিজয় ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান। বর্তমান সরকার সংস্কারের যে কথা বলছে, বিগত ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া সেই একই কথা বলেছিলেন। এটি নতুন কোনো বিষয় না। তারপরও ভোটের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার ততটুকু করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। আমরা আশাবাদী ইউনূস সরকার দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেবে।

অপরদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে সারা দেশের মহানগর জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত সমাবেশে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সকল বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দয়া করে আমাদের দিকে কেউ আর চোখ রাঙানি দেবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলবেন না। আমাদের ভদ্রতাকে যেন দুর্বলতা মনে না করেন। ভদ্রতা যখন শক্ত হয়, তা কেমন হয় দেশের জনগণ সাড়ে ১৫ বছর পরে টের পেয়েছে। জীবন দিয়েছি কিন্তু জামায়াতে ইসলামী কোন কুশক্তির সঙ্গে আপস করেনি।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এক এক করে মজলুমদের যেভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে একইভাবে এটিএম আজহারুল ইসলামকেকেও মুক্ত দিতে হবে। তিনি আর এক মিনিটও জেলে থাকুন আমরা সেটা চাই না।

এদিকে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশে করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও ছাত্রদল।

প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। এর পরপরই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। ফলে ওই সময়টাতে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করে দু’পক্ষের মধ্যে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে গেছে। তাই যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন। আমি মনে করি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাহলেই গণতন্ত্রের পথ সুগম হবে এবং বর্তমান উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সহজ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫
টিএ/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।