ঢাকা, রবিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হেঁটেই ৯৩ দিনে ৬৩ জেলা ঘুরলেন আকাশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
হেঁটেই ৯৩ দিনে ৬৩ জেলা ঘুরলেন আকাশ ট্রাভেলার আকাশকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাজবাড়ীর সাংবাদিকরা

রাজবাড়ী: ‘মাদক ছাড়ো দক্ষ হও, সমৃদ্ধির পথে আগাও’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে হেঁটে হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন মো. আকাশ আলী (১৯) নামের এক শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে ৬৩ জেলা ঘুরে শেষে করেছেন তিনি।

এই ৬৩ জেলা ঘুরতে তার ৯৩ দিন সময় লেগেছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ৬৩তম জেলা হিসেবে রাজবাড়ী জেলায় আসেন।  

আকাশ আলী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার রামদিয়া গ্রামের মো. শরীফুল ইসলামের ছেলে। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার খাশকওড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী।

দেশ ভ্রমণের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা জানতে কথা হয় মো. আকাশ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেকে সাইকেলে-মোটরসাইকেলে দেশ ভ্রমণ করেন। আমি কিন্তু ব্যতিক্রম; হেঁটে দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্য বের হয়েছি। এমনটি করার কারণ, সাইকেল বা মোটরসাইকেলে ঘুরলে পর্যটন স্পটগুলো দেখা যায় কিন্তু গ্রাম দেখা যায় না সেভাবে। আমি হেঁটে শহরেও যাচ্ছি, গ্রামেও যাচ্ছি। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কথাও হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা থেকে ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্দেশে বের হই মাত্র ৩ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ১২ দিনে ৯ জেলা ঘুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে আমি আবার চুয়াডাঙ্গায় ফিরে যাই। কিন্তু তিনি মৌখিক অনুমতি দিলেও লিখিত কোনো অনুমতি দেননি সে সময়। পরে পুনরায় ১ ডিসেম্বর থেকে ৬৪ জেলা ভ্রমণের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি রংপুর জেলা থেকে। আজ রাজবাড়ী জেলায় এলাম ৬৩তম জেলা হিসেবে। এই ৬৩ জেলা ঘুরতে আমার ৯৩ দিন সময় লেগেছে। আগামীকাল মাগুরা শ্রীপুর উপজেলায় থাকব। পরের দিন ঝিনাইদহ জেলা ভ্রমণ দিয়ে আমার ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, এই ৬৩ জেলা ভ্রমণের জন্য আমাকে ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি হাঁটতে হয়েছে। পায়ে হাঁটার চলার মুহূর্তে আমার সঙ্গে অনেকেরই দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। আমি চলার মুহূর্তে সবাইকে মাদক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ আমি ‘মাদক ছাড়ো দক্ষ হও, সমৃদ্ধির পথে আগাও’  এই স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করি।

ট্রাভেলার আকাশ বলেন, আমি বাড়ি থেকে মাত্র ৩ হাজার টাকা নিয়ে বের হই। আমি কখনো ভাবতে পারিনি বাংলাদেশের মানুষ এতো ভালো। ৬৪ জেলা ভ্রমণে চলার পথে আমাকে প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসন আমাকে সাপোর্ট করেছে। চলতি পথে অনেকেই আমাকে এক বেলা খাইয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে, থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই সহযোগিতার মাধ্যমেই আমি আজ এতদূরে আসতে পেরেছি।

তিনি বলেন, প্রথমত আমি যখন বের হই তখন পরিবারের কাউকে জানাইনি। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হই। কারণ, পরিবার তো চাইবে না এতদিন বাড়ির বাইরে থাকি। তাই আমি কাউকে না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। পরে আস্তে আস্তে সবাই জেনেছে। জানার পর পরিবার থেকে আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার বাংলাদেশ ঘোরা প্রায় শেষের দিকে। এখন আমার ইচ্ছা বাইরের দেশ ভ্রমণের। এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

যাত্রার শেষ পর্যায়ে এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে আকাশ আলী বলেন, এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা।  

চলার পথে সবার সহযোগিতাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, মানুষের কাছে যে পরিমাণ সহযোগিতা আশা করেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি সহযোগিতা পেয়েছি। এজন্য সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

এদিকে ট্রাভেলার মো. আকাশ আলী রাজবাড়ী জেলার দৈনিক মাতৃকণ্ঠ কার্যালয়ে গেলে পত্রিকার সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী আব্দুল কুদ্দুস বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম হিরণ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে উৎসাহ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
এফএইচ/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।