খুলনা: খুলনার বটিয়াঘাটায় ইজিবাইক চালক হাফিজুল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে মো: হাসান নাকিব ও তার স্ত্রী রেশমা খাতুন। সোমবার (১০ মার্চ) বিকেলে তাদের জবানবন্দি রোকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ১ এর বিচারক অমিত কুমার মন্ডল।
এর আগে ইজিবাইক চালক হাফিজুল হত্যার অভিযোগে পুলিশ রোববার (৯ মার্চ) রাতে খালিশপুর এলাকা থেকে রেশমা খাতুন এবং হাসান নাকিবকে বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করে । এ সময়ে পুলিশ তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চা-পাতি ও নাইলনের দাড়ি উদ্ধার কারা হয়।
চালক হাফিজুল হত্যার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা খায়রুল বাশার বলেন, হাফিজুল নগরীর খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা। হত্যাকারী হাসান নাকিব ও তার স্ত্রী রেশমা খাতুন নিহত হাফিজুলের প্রতিবেশী। ইজিবাইক ছিনতাই করার জন্য ওই দম্পত্তি পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় হাসান।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ মার্চ রাত সাড়ে ১০ টার দিকে খালিশপুর থানাধীন লাল হাসপাতাল চৌরাস্তার মোড় থেকে বটিয়াঘাটা যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাফিজের ইজিবাইকে হাসান নকিব ভাড়া নেয়। পথিমধ্যে হাসানের স্ত্রীকে নয়াবাটি মোড় থেকে ইজিবাইকে তুলে নেয় হাসান। কিন্তু তখনও হাফিজুল আচ করতে পারেনি কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হবে। বাটিয়াঘাটা উপজেলার গাওঘরা এলাকায় ইজিবাইক নিয়ে হাফিজুল পৌঁছামাত্র হাসান ও তার স্ত্রীর কাছে থাকা নাইলনের দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় তাদের কাছে থাকা চা-পাতি দিয়ে গলায় আঘাত করে হাসান নকিব। আঘাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে মরদেহটি রাস্তার পাশে এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত উপকরণগুলে ঘটনাস্থল থেকে দুরে ফেলে ইজিবাইক নিয়ে খানজাহান আলী সেতু পার হয়ে তারা বাগেরহাটের দিকে চলে যায়। কিছুদুর যাওয়ার পর চার্জ না থাকায় ইজিবাইকটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই ইজিবাইক টেনে নেওয়ার জন্য তারা বাগেরহাট থেকে অপর একটি ইজিবাইক নিয়ে আসে। কেউ যেন তাদের সন্দেহ না করে সেজন্য রেশমা খাতুন খালিশপুর এলাকার ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসে।
৯ মার্চ রাত পৌনে ১২ টার দিকে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ১১/১ খালিশপুর সেন্ট্রাল ওয়েষ্ট রোড এলাকা থেকে রেশমা খাতুনকে আটক করে। পরে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ তার স্বামী হাসান নাকিবকে বাগেরহাটের সিএন্ডবি বাজার থেকে আটক করা হয়। এ সময়ে হাফিজুলের ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটি বাগেরহাটের কুলিয়ারদাড় এলাকার হায়দার শেখ এর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। উভয় পুলিশের কাছে আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে চাইলে তাদের আদালতে উপস্থিত করা হয়।
উল্লেখ্য শুক্রবার (৭ মার্চ) সকাল ৮ টার দিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার ২ নং ইউনিয়নের সত্যজিত রায়ের জমি থেকে খুলনার খালিশপুর এলাকার ইজিবাইক চালক হাফিজুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাফিজুলের মরদেহ শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম উল্লেখ করে বটিয়ায়ঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। পরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের আটক করে পুলিশ। হত্যাকান্ড’র দায় স্বীকারের পর তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
এমআরএম