অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সদ্যসমাপ্ত জাপান সফরে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশি জনশক্তি পাঠানোর একটি বড় পথ উন্মুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার (০১ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টার এই সফরের মাধ্যমে শুধু বিনিয়োগই নয়, বাংলাদেশি কর্মীদের জাপানে পাঠানোর জন্যও একটি বড় পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর বিষয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
আগামীতে জাপান বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজারে পরিণত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শফিকুল আলম জানান, জাপান সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প মাতারবাড়ী নিয়ে।
তিনি বলেন, মাতারবাড়ী প্রকল্পে জাপান বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে। এ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৃহৎ অংশ জাপান দেবে। তারা সমুদ্রবন্দর, পাওয়ার প্ল্যান্ট, এলএনজি টার্মিনাল এবং লজিস্টিক হাব তৈরিতে সহায়তা করবে।
প্রেস সচিব বলেন, জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পে সক্রিয় রয়েছে। তবে এবার জাপানের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরাও এই বৃহৎ প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ানোর বিষয়টিও সফরের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এবং এটি অনেকাংশে সফল হয়েছে।
জাপানের মূল বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) সঙ্গে বাংলাদেশ পক্ষের আলোচনাকে প্রেস সচিব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জেটরো’র সঙ্গে আমাদের বৈঠকে তারা বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বর্তমানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডমুখী হলেও বাংলাদেশকে তারা দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে দেখছেন।
এই সফরের পর জাপানের অনেক বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে বলে প্রেস সচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শফিকুল আলম বলেন, জাপানে জনশক্তি পাঠানো নিয়ে ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে এবং দেশটির সরকার জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে তারা ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিতে চায়। বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা করা হবে, যাতে দক্ষ শ্রমিক তৈরি, ভাষা প্রশিক্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল স্কিল উন্নয়নের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, জাপানের শ্রমবাজারে কাজ করতে গেলে ভাষা ও সংস্কৃতির বাধা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এ সমস্যা মোকাবিলায় এখন থেকে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভাষা প্রশিক্ষণ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করবে।
জাপানে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভিসা প্রক্রিয়া একটি বড় জটিলতা হিসেবে ছিল। এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ভিসা জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এই সমস্যা সমাধানে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি এসেছে। বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ সহযোগিতায় একটি সহজীকৃত ভিসা প্রক্রিয়া চালুর চিন্তা রয়েছে, বিশেষ করে কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও শিক্ষা সংক্রান্ত ভিসার ক্ষেত্রে।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর ছিল কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নয়, এটি ছিল কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের একটি প্ল্যাটফর্মও।
এমইউএম/এমজেএফ