ঢাকা: সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অঙ্গীকার পূরণ করাই হবে আগামী দিনে আমাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
বাজেট বক্তৃতায় সংস্কার কমিশন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারীরা আমাদের সামনে একটি বিরল সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেছেন দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করে ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত গড়ার। সবার সর্বাত্মক সহযোগিতায় সে লক্ষ্য পূরণের প্রত্যয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অঙ্গীকার পূরণ করাই হবে আগামী দিনে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত দেড় দশকে দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাবে দেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে ছিল। তাই দেশকে পুনরায় সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা তৈরি এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে সবগুলো কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নির্মূলের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর সংশোধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন অনুসরণে দুর্নীতি দমন কমিশন যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত ‘দুদক সংস্কার কমিশন’ সম্প্রতি তাদের সুপারিশ প্রদান করেছে যা যাচাইপূর্বক দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতি হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা মোকদ্দমাগুলো হ্রাস করা এবং ভূমিসেবাকে সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। অটোমেটেড ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতায় ভূমিসেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ভূমি প্রশাসনের সব সেবা পরিকাঠামোকে জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশন প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, ও আদেশ সংশোধন ও সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।
বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে সারা দেশের অধস্তন আদালতসমূহ তত্ত্বাবধান করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের ১৩ জন বিচারপতির সমন্বয়ে ১৩টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করার উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সুরক্ষা সেবার মানোন্নয়নে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণের শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
টিআর/আরআইএস