ঢাকা: “মাঠে বসে ছিলাম। আম্মুর কাছ থেকে টিফিন খেয়ে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল মাঠে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় ছোট্ট জাহিনের। সকালে মায়ের সঙ্গে স্কুল দেখতে এসেছিল সে।
জাহিন বলে, আমার বন্ধু মাহীন মারা গেছে। বিমানটা যখন ভেঙে পড়ে, তখন মনে হচ্ছিল আমি অজ্ঞান হয়ে যাব। কখনো ভাবিনি এভাবে আমার ক্লাসে একটা বিমান ঢুকে পড়তে পারে। ওই ভবনে ছিল আমাদের বাংলা বিভাগের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। পাশে ছিল প্রিন্সিপাল স্যার ও টিচার্স রুম।
জাহিন আরও জানায়, ঘটনার সময় ক্লাসে ১১ জন ছিল। আমার দুই বন্ধু প্রাণে বেঁচে ফিরেছে। সাধারণত আমাদের ক্লাসে ৪০ জনের মতো ছাত্র থাকে। কোচিং ক্লাস চলছিল বলে ছাত্র কম ছিল।
জাহিনের মা নারগিস পারভীন বলেন, প্রতিদিন মূল ক্লাস শেষে কোচিং ক্লাস হয়। এই বিরতিতে গতকালও আমার ছেলে মাঠে খেতে আসে। সে হাত ধুয়ে ক্লাসে যাচ্ছিল। বিমানটা দেখে ছেলেকে বলি দেখো প্লেনে আগুন ধরে গেছে। এর এক মিনিটের মধ্যেই প্লেনটা ওদের ক্লাসে ক্রাশ করে। আমার ছেলেটা বেঁচে গেছে, ঐ দুই মিনিটের জন্য খেতে বের হওয়ার কারণে। অনেকে বের হতে পারেনি, অনেকে আহত হয়েছে। এটা হৃদয়বিদারক ঘটনা।
এর আগে সকাল থেকেই মাইলস্টোন স্কুলে উৎসুক জনতার অনেক ভিড় দেখা গেছে। এই ভিড়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, উৎসুক জনতা ও স্থানীয়রা আছেন। তাদের অনেকে মোবাইল হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন।
মাঠে কথা হয় মাইলস্টোন কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষার্থী মো. রাতুল চৌধুরীর সঙ্গে। ঘটনার সময় সে হোস্টেলে ছিল। রাতুল জানান, বড় আওয়াজ শুনে আমরা পাঁচ থেকে ছয়জন দৌড়ে এখানে আসি। এসে দেখি, আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে, আর মানুষরা ভিডিও করছে। গ্রিল ভেঙে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের বের করা হচ্ছিল। এরপর সেনাবাহিনী আসে, সবাইকে বের করা হয়। একটা প্লেন এসে পড়বে-এরকম কলেজে হবে এটা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি।
রাতুলের আজ রসায়ন দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। তবে সে পরীক্ষা স্থগিত হয়। রাতুল বলেন, গতকাল রাত তিনটার দিকে জানতে পারলাম, আজ পরীক্ষা হবে না। আমাদের বন্ধুদের অনেকে সকালে পরীক্ষা দিতে চলে গেছে। অথচ আমাদের গভীর রাতে জানানো হলো আজ পরীক্ষা হবে না।
এর আগে, গতকাল (২১) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে একটি ফাইটার জেট উড্ডয়ন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ১৬৪ জন।
এমএমআই/এমএম