ঢাকা, শুক্রবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩২, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১০, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) এর সংবাদ সম্মেলন

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)।

বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, এই সংকট শুধু মানবিক নয়, এটি এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বড় হুমকি।

তহবিল সংকট ও খাদ্য ঘাটতি

সংবাদ সম্মেলনে এপিএইচআর জানায়, এ মুহূর্তে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থান করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মাসে অন্তত ১৭ কোটি ডলার প্রয়োজন হলেও আন্তর্জাতিক সহায়তা অর্ধেকেরও কম আসছে। এতে শরণার্থী শিবিরে খাবার, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে।

এপিএইচআর নেতারা বলেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধচক্র, মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান আরও বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশসহ গোটা অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ও এপিএইচআর কো-চেয়ার চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট শুরু হয়েছে আট বছর আগে। কিন্তু আসিয়ান এখনও এটিকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে নেওয়ার মতো রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে পারেনি। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি—মানবিক তহবিল দ্রুত গঠন করতে হবে এবং একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকা উচিত। ”

মালয়েশিয়ার বর্তমান এমপি ওং চেন বলেন, “রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের মানুষ। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য। তাই শুধু বাংলাদেশ নয়, আসিয়ান দেশগুলোরও এ বোঝা বহন করা উচিত। মাসে অন্তত ১৭ কোটি ডলার না পেলে শরণার্থীদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। ”

ফিলিপাইনের সাবেক কংগ্রেস সদস্য রাউল ম্যানুয়েল বলেন, “যুব রোহিঙ্গাদের শিক্ষার সুযোগ নেই, দক্ষতা অর্জনের পথ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে তারা যদি এভাবে আটকে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে পুরো অঞ্চল নতুন সংকটে পড়বে। ”

আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব

এপিএইচআর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ, চীন ও আসিয়ানকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব দেন। তাদের মতে, যৌথ রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরাসরি আসিয়ান সদস্য না হওয়ায় অনেক সময় এই ফোরামে নিজের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারে না।

বাংলাদেশের অবস্থান

এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বলেছেন, “বাংলাদেশ যদি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে পারে, তাহলে এ ধরনের ইস্যুতে সরাসরি ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। ”

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক দমনপীড়নের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির গড়ে উঠেছে কক্সবাজারে। তবে এত বিপুল জনসংখ্যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি তহবিল ও টেকসই সমাধান না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।