আবরার ফাহাদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত সেমিনার ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে অতিথি নির্বাচন নিয়ে দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে “ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: স্মরণে আবরার ফাহাদ” শীর্ষক সেমিনার আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আমন্ত্রিত হয়েছেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিতরা হলেন—বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আয়নাঘর ভিক্টিম হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, জবানের সম্পাদক রেজাউল করিম রনি, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী, আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাইয়াজ এবং আপ বাংলাদেশের মুখ্য সমন্বয়ক ও শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত।
আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতারা ও বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রনেতারা এই অতিথি তালিকার সমালোচনা করেছেন।
তারা বলছেন, ডাকসুর মতো একটি প্রাতিষ্ঠনিক অনুষ্ঠানে সেই সময় সামনের সারির কোনো আন্দোলনকারীদের ডাকা হয়নি। ছাত্রশিবিরের একাধিক নেতা আমন্ত্রণ পেলেও তখন সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা, বিশেষ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্রদল ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতারা কেউ আমন্ত্রণ পাননি। এভাবে ছাত্রশিবির একটি একপাক্ষিক ইতিহাস নির্মাণের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত নিজের ফেসবুকে এটিকে ইতিহাসের একপক্ষীকরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে প্রথম দিন নাহিদ ভাইয়ের নেতৃত্বে একটা ইভেন্ট খুলি আমরা। তার অন্যতম অ্যাডমিন ছিলাম আমি। আসিফ মাহমুদ লজিস্টিকসের দায়িত্ব নেন। আকরাম হোসাইন বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একাজে শামীম রেজায়ীও ছিলেন। পুরা প্রোগ্রামটায় স্লোগান দেয় তারিকুল ভাই এবং আমি। ওই দিনই আমি নাহিদ ভাইয়ের পরামর্শে বুয়েটের সামনে ‘দিল্লি না ঢাকা’ স্লোগান দিই। ওই মিছিলে ছাত্রদল থেকে কানেতা-ইয়া-লাম-লাম সহ আরো অনেকে ছিলেন। ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরাও ছিলেন।
তিনি বলেন, এরপর প্রতিবছর এই দিনটি উদযাপন করে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এমনকি এই দিন উদযাপন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী আমলে হামলা-মামলা এবং জেল-জুলুমেরও শিকার হয়েছি। ২০২৩ সালে এই দিবস পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন আখতার ভাইরা। কিন্তু ডাকসুর এই সেমিনারে পোড় খাওয়া অ্যাক্টিভিস্ট কিংবা রাজনৈতিক দল বা পক্ষগুলোর কেউ নাই।
সালেহ উদ্দিন সিফাত আরও বলেন, জামায়াতের ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব এই লড়াইয়ে কী ভূমিকা রেখেছেন? শরীফ ওসমান হাদী অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু যারা হাসিনা আমলে এই সংগ্রামের ফ্রন্টলাইনার ছিল তাদের চেয়ে কি উনি বেশি হকদার? রাফে সালমান ভাই শিবির সভাপতি হিসাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিটা করেছেন। কিন্তু উনিও কি এই ফ্রন্টলাইনারদের চেয়ে বেশি হকদার?
রাফে সালমান রিফাতের আপ বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হলেও আখতার হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। আবরার ফাহাদের ত্যাগকে ‘শিবিরীকরণ’ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে তারা আবরার ফাহাদের সর্বজনীনতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই সেমিনারে আখতার হোসেনের অংশ নেওয়া অমর্যাদাকর বলে ইতোমধ্যে ফেসবুকে এনসিপি এবং তাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক ছাত্রনেতা মত দিয়েছেন। পরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি আখতার হোসেন।
এদিকে সব দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি এবং ভুক্তভোগীদের সেমিনারে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা।
বাংলানিউজকে তিনি বলেছেন, আমরা শুধু শিবির রাখিনি। আমরা বিএনপি থেকে একজন, এনসিপি থেকে একজন, আপ বাংলাদেশ থেকে একজন এবং যারা ভুক্তভোগী ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে একজন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিয়ে যারা প্রাসঙ্গিক এবং যাদের লেখালেখি আছে, তাদের ডেকেছি।
অতিথি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা কথা বলে করেছি। এটা আমার এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক আলীর সেগমেন্ট ছিল। আমরা কথা বলে করেছি।
জুমা আরও বলেন, এখানে হতে পারে আরও অনেকের কাজ আছে। অনেকে ভিক্টিম ছিলেন। হাজার-লাখখানেক মানুষ ভুক্তভোগী ছিল। সবাইকে তো আমার পক্ষে ডাকা সম্ভব না। আমি যাদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি, তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ছাত্র ফেডারেশন বা বামপন্থার প্রতিনিধি হিসেবে এবং ভিক্টিম হিসেবে আমি উমামা ফাতেমাকে ডেকেছিলাম, কিন্তু তার সময় ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি। তারপরও ভুল হয়। তাদের সমালোচনাও যৌক্তিক।
এফএইচ/এমজেএফ