ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাম্প্রদায়িকতা-দখলদারিত্ব বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
সাম্প্রদায়িকতা-দখলদারিত্ব বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

ঢাকা: সাম্প্রদায়িকতা ও দখলদারিত্ব বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলেছে, অপরাধী যে দলেরই হোক, এমনকি সরকার বা সংসদের ক্ষমতাবান কোনো ব্যক্তি হলেও তাদের বিচারের আওতায় আনার মাধ্যমে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা ও দখলদারিত্ব বন্ধ করা সম্ভব।



শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত বর্ধিত সভায় এ কথা বলা হয়। সভা শেষে এর আলোচনা নিয়ে সংগঠনের সভাপতি কানুতোষ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অনুপম রায় এক বিবৃতি দেন।

বিবৃতির বর্ণনা অনুযায়ী সভায় বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মূল রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে একটানা সাড়ে ছয় বছরের অধিককাল যাবত রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশবিরোধী চিহ্নিত দুর্বৃত্ত এবং রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিকারী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের অনেকেই এই মুহূর্তে আত্মগোপনে, তারা অনেকটাই নীরব ও কোণঠাসা। এ পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় নিরঙ্কুশ শক্তি হিসেবে এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও নিরুপদ্রব জীবনযাপন করবে স্বাভাবিক নিয়মে, সেটাই হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তার বেশ কিছু ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে বৈকি।

বহুল আলোচিত এক-এগারোর পর থেকে শুরু করে বর্তমান চলমান সরকারের প্রথম দিক পর্যন্ত, সব মিলিয়ে প্রায় চার বছর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা অনেকটাই স্তিমিত থাকে। তবে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওয়তায় নিয়ে আসার পর থেকে দেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে হামলা ও বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন শুরু করে। সর্বগ্রাসী এসব হামলা থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, জায়গা-জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দেবদেবীর মূর্তির কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। মূলত বর্তমান সরকারবিরোধী, তথা স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের হাতে এসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ পরিচালিত হয়ে আসছে বলে জনসমক্ষে আপতদৃষ্টিতে প্রতিভাত হলেও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দেশের বেশ কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাদের সহায়-সম্পত্তি দখলের বেলায় এক ধরণের সর্বদলীয় ঐক্য প্রত্যক্ষ করা যায়। কোথাও আবার কেবল সরকার দলীয় ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় কিংবা তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতেও এসব ঘৃণিত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে দেখা যায়।

সভায় বলা হয়, বিগত কয়েক মাস যাবত রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিমুক্ত থাকলেও সাম্প্রদায়িক হামলা বা দখলদারিত্ব চলমান রয়েছে। বেড়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ। আর এসবের শিকার হচ্ছে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ অসাম্প্রদায়িক, মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী জনগোষ্ঠী। জঙ্গিরা তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে আগাম ঘোষণা দিয়ে বা মৃত্যুপরোয়ানা পাঠিয়ে একের পর এক মানুষ হত্যা করছে।

জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, সারা দেশে অনেক এলাকার মতো পিরোজপুর, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও এবং গাইবান্ধায় দখলদারিত্ব ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী বা সমাজে ক্রিয়াশীল একাধিক সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে, সেসব ক্ষেত্রে দায়ী করা হচ্ছে বর্তমান সরকার দলীয় ব্যক্তিদের। শুধু জায়গা-জমি দখলের কথাই নয়, বলা হচ্ছে ওইসব ব্যক্তির অঙ্গুলি হেলনে মু্ক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, নিজ দলীয় রাজনৈতিক কর্মী, বংশানুক্রমিক জমির মালিক প্রমুখের উপর হামলা, হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে, কাউকে গ্রেফতারও করে পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। আরও অভিযোগ করা হচ্ছে, কায়দা করে কোনো কোনো ভুক্তভোগী বা মুষ্টিমেয় এলাকাবাসীকে দিয়ে ক্ষমতাশীলদের পক্ষে নানা ধরণের সাফাই গাওয়ানো হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, আজ যারা ক্ষমতাসীন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেই ঐতিহাসিকভাবে তাদের সমর্থনদানের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান সর্বদাই নিরঙ্কুশ। সে কারণেই আমরা স্থির বিশ্বাস স্থাপন করতে চাই, কোনোভাবেই এদেশ সাম্প্রদায়িকতাযুক্ত মধ্যযুগীয় বর্বরতায় ফিরে যাবে না, গ্রাস করতে পারবে না ধর্মীয় কূপমণ্ডুকতা। সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বয়ানদান ইত্যাদি সবকিছুই সংশ্লিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে বিধায় সেসব ব্যাপারে সরকারি এবং দলগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আমরা আশাবাদী হতে চাই। কারণ সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উন্মাদনাপ্রসূত হামলার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে খুব নগণ্যসংখ্যকদের এ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা চাই এসব অপরাধীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সেক্ষেত্রে অপরাধী যে দলেরই হোক, এমনকি সরকার বা সংসদের ক্ষমতাবান কোনো ব্যক্তি হলেও তাদের বিচারের আওয়তায় আনার মাধ্যমে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা ও দখলদারিত্ব বন্ধ করা সম্ভব।

জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়শনের নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সম্প্রতি সরকারি দলের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দখলদারিত্বের যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগী হয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনপূর্বক তা জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যবস্থা করবেন। কেউ দোষী সাব্যস্ত হওয়া সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাহলেই কেবল সেসব নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজাল কেটে যাবে, আর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্বস্তিবোধ দূর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।