ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রাস্তায় ইট বিছিয়ে ব্যবসা

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
রাস্তায় ইট বিছিয়ে ব্যবসা ছবি: দীপু / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

স্বরূপকাঠি-ভীমরুলী (পিরোজপুর-ঝালকাঠি) থেকে ফিরে: তিন জেলার একই বন্ধন। স্থানীয় ব্যসায়ী-আড়তদাররা বলে থাকেন ‘পেয়ারা বন্ধন’।

সময় যত এগিয়েছে এই বন্ধন তত পরিপক্ব হয়েছে। কিন্তু এ বাঁধনের পেছনে সুখ স্মৃতি যত না, তার চেয়ে বেশি দুঃখ আর হতাশ হওয়ার দিনরাত্রি।

বিভাগীয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিকে এক করেছে পেয়ারা। অন্য আরও অনেক কিছুতেই মিল থাকলেও, এ মিলন এনে দিতে পারে তিন অঞ্চলের একেবারে প্রান্তিক মানুষের মুখের হাসি। এতে তৃণমূল মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে আরও তরান্বিত। এমন স্বপ্নবাজ তরুণ-যুবা-বৃদ্ধ সব বয়সীই রয়েছেন, যারা এটি ভাবেন- আরও গভীরভাবে ভাবছেন। কিন্তু প্রাথমিকভাবে দেখছেন যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নকেই।

এই তিন জেলার বেশ কিছু গ্রাম পেয়ারার জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে তিন জেলার তিনটি উপজেলায় দেশি পেয়ারার অধিক উৎপাদনে জুড়ি নেই। এখানকার ৩১ হাজার একরেরও বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু এই ফল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নেই পেয়ারার উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না চাষি-বাগানিরা। এতে ভরা মৌসুমে অধিক উৎপাদন নিয়ে উল্টো বিপাকে পড়েন তারা। প্রতি বছরের মতো এবারও তাই হয়েছে।

এক পাশ দিয়ে বর্ণনায় পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলা। সেখানকার সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে গেছে খাল। যার বিভিন্ন ক্ষুদ্র শাখাও রয়েছে। তবে প্রধান খাল একটি। যা সোজা পথ ধরেছে ঝালকাঠির। সে খাল ধরে নলছিটি হয়ে বরিশাল জেলাতেও যাওয়া যায়। খালের নাম স্থানের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে।

এ খালের ধারে-ধারেই গড়ে উঠেছে পেয়ারা রাজ্য তথা বাগান। খালের পাড়ে গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি পেয়ারা বিক্রির ভাসমান হাট। যার সব চেয়ে বড় হাটের নাম ভীমরুলী। এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি পেয়ারা হাট বলা হয়। আর ভাসমান বিষয়টি তো এর আরও একটি গুরুত্বের দিক। পেয়ারা আড়ত চোখে পড়বে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির খেয়াঘাট পেরিয়ে মাহমুদকাঠিতে, এরপর কুড়িয়ানায়, আটঘর, ধলহার, ব্রাহ্মণকাঠি, আদমকাঠিতে। তারপর হঠাৎ সরু খাল বেয়ে পাশের জেলা ঝালকাঠি। এক-দুই কিলোমিটার পেরুলেই ভীমরুলীতে প্রবেশ। ভাসমান সবচেয়ে বড় হাট থেকে আরও এগিয়ে গেলে নলছিটি হয়ে বরিশাল। চাষিরা কিংবা গাছিরা (স্থানীয় ভাষায় গাছারু) নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে আসেন এসব হাটে, আর ট্রলারে করে আসা আড়তদার-বেপারীরা কিনে নেন।

কিন্তু আড়তদার-বেপারীরা কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মোকামে পাঠাতে হন হেনস্তা। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা গঠিত মূলত দুইভাবে। নৌপথে ও সড়কে। পেয়ারাও যায় একইভাবে। তবে দুরাবস্থা সবখানেই।

বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভোর বেলায় পাড়া টাটকা পেয়ারা স্থানীয় আড়তদাররা হাতে পান দুপুরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান বিকেলে, যা পৌঁছাতে পৌঁছাতে পরদিন সকাল। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মোকাম থেকে সে পেয়ারা ক্রেতা-ভোক্তা পর্যায়ে যায় রাতে। ঘণ্টা হিসেবে আনুমানিক ৩৬! এতে পচনশীল ফল পেয়ারা হারাচ্ছে তার গুণ, হচ্ছে পাকা, যাচ্ছে পচে। ফলে ক্ষতি সাধান আরও ব্যাপকতা পাচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন জেলার মোকাম মালিকরা কম করে পেয়ারা নিচ্ছেন নষ্ট হওয়ার ভয়ে। সব মিলিয়ে এই ব্যবসায় ভরা মৌসুমে ধস নামছে। পরের দিকে এসে একটু দাম উঠছে (মণে ৫০০ থেকে ৬০০)। প্রথম দিকে কৃষক পাচ্ছেন মণে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বাংলানিউজকে এসব বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন কুড়িয়ানার আড়তদার আবদুল হক বেপারী। কুড়িয়ানার পাঁচ আড়ত ভদ্রাঙ্ক, জিন্দাবাজার, আন্ধাকুল, আটঘর, আদমকাঠি থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকায় পাঠান তিনি। অনেকে নদীপথে লঞ্চে পেয়ারা পাঠালেও আবদুল হক সড়ক পথেই বেশি পাঠান। পেয়ারা মৌসুমের শুরুতে সিলেট, চট্টগ্রামেও পাঠিয়েছেন। এখন ভাদ্রের শেষ বেলায় শুধু ঢাকাতেই যাচ্ছে। যেতে পথে ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরলেন এই বৃদ্ধ আড়তদার।

তিনি বলেন, ভরা সিজনে ডেইলি ৩০০/৪০০ মণ পেয়ারা পাঠাইতাম। অনেক অসুবিধা হয় পাঠাইতে। কুড়িয়ানা, ভীমরুলীসহ আশপাশের আড়ত থেইকা প্রথমে বড় ট্রলারে পণ্য কিন্না যাইতে হয় অনেক পথ। কারণ কুড়িয়ানা টু স্বরূপকাঠি-নবগ্রাম রোড ভালো না। এতে সময় লাইগা যায় অনেক। নষ্ট হইতেছে ফল।

আবদুল হক বেপারী জানান, তিনি অনেক পণ্য পাঠান তাই লঞ্চে সম্ভব নয়। আর ঢাকার লঞ্চও একটি কী দু’টি ছাড়ে। পেয়ারা মৌসুমে ঢাকা থেকে স্বরূপকাঠি লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।

সড়ক উন্নয়নের জোর দাবি তুলে তিনি আরও বলেন, বরিশাল চৌরাস্তা থেইকা সিকিন্দা, নবগ্রাম, হিমানন্দকাঠি, কুড়িয়ানা স্বরূপকাঠি সড়ক সংস্কার করতে হইবো। মাঝে বেশ কিছু জায়গায় ভাঙ্গা আছে তা তৈরি করতে হইবো। এতখান রোডের মধ্যে ৩০টা ছোট-বড় ব্রিজ আছে, যা নির্মাণ-পুনঃনির্মাণ-সংস্কার লাগবো। প্রয়োজনে তাই করতে হইবো। নয় তো এই এলাকার আশা জাগানিয়া পেয়ারায় আর আশার কিছুই থাকবো না।

‘বর্তমানে কুড়িয়ানার রাস্তায় নিজেরা ইট বিছাইয়া ব্যবসা করতেআছি, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাল পাঠাতেআছি’। টানা রাস্তা না হলে এই এলাকায় আগামী ৫/৬ বছরের মধ্যে পেয়ারা উৎপাদন ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে এমন শঙ্কার কথাও জানান তিনি।
 
সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ী অমল হালদার (৫৪) বলে উঠলেন কথা। তার পাশেই ছিলেন তিনি। ‘কেউ খোঁজ রাহে না আমগো। কারো কোনো গুরুত্বই নাইগা। পেয়ারা দিয়া যে এই এলাকার চিত্রই বদলাইয়া দেওন সম্ভব তা সরকার বোঝে কিনা টেই পাই না’ মন্তব্য অমলের।

নিজের উদারহণ টেনে তিনি বলেন, আজ পেয়ারা কিনা ট্রলারে কইরা কুড়িয়ানা হয়ে পিকআপে পাঠাইতেছি। যেতে পথে হিমানন্দকাঠি, নবগ্রাম, সিকিন্দা পার করে বরিশাল চৌরাস্তার পথ। ছোট্ট পথ, তবে অনেক সময় লাইগা যায় রাস্তা খারাপ বলে। এর উন্নয়নে সরকার নজর দিলে আমরা আরও ব্যবসায়ীক উন্নতি ঘটাইতে পারতাম, দেশেরও উন্নতি হইতো। সর্বপরি সারাদেশে পুষ্টিকর পেয়ারা পৌঁছাইতো।

বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারার রাজ্য এই অঞ্চল। যাতায়াত সমস্যায় অগ্রসর হতে পারছে না এই এলাকার ৩১ হাজার একরেরও বেশি জমির পেয়ারা চাষ। ফলে বিপাক কেবল চাষিদেরই নয়, ব্যবসায়ী-আড়তদারদেরও, এমনই মত স্থানীয় মো. আলমগীর হোসেনের। বাড়ি এখানেই। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী তিনি। সরাসরি পেয়ারা কিনে নিয়ে যান স্বরূপকাঠি কুড়িয়ানা রুট দিয়ে। তিনি বলেন, ঢাকায় পৌঁছানোই তো কষ্টকর। তাই পিছিয়ে এ অঞ্চল ও পেয়ারা চাষ। রাজধানীর মানুষ তো এসব পেয়ারা গাছ থেকে পাড়বার ৪-৫ দিন পরে পান, তাতে কি আর সরাসরি বাগানের স্বাদ-মজা-ঘ্রাণ থাকে!

এদিকে স্বরূপকাঠি খেয়াঘাট হয়ে সন্ধ্যা নদী দিয়ে লঞ্চ যায় ঢাকায়। তবে দৈনিক লঞ্চের সংখ্যা কম। চাষিসহ ব্যবসায়ীদের দাবি অন্তত পেয়ারা মৌসুমে বিষয়টি ভেবে দেখে লঞ্চ সংখ্যা বৃদ্ধি বা বিশেষ ব্যবস্থা করা যায় কিনা। তাহলে এই এলাকার পেয়ারা ঢাকা ছাড়াও খুব সহজে সরাসরি যেতে পারবে মুন্সীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ওদিকে চাঁদপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন নদীকেন্দ্রিক অঞ্চলে।

স্বরূপকাঠি থেকে সড়ক পথে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরের প্রধান পথ বরিশালের গরিয়ারপাড়ের সড়কটি। কিন্তু এর দশা একেবারেই বেহাল। এবড়োথেবড়ো রাস্তায় গাড়ি চালানোই দায়। ঝাঁকি খেতে হয় গাড়ি ভোঁ টান দিলেই। এ সড়কের উন্নয়নেও হতে পারে নতুন দ্বার উন্মোচন।

কুড়িয়ানার চাষি নিরণ চন্দ্র রায়। সরাসরি গাড়িতে করে ঢাকায় পাঠান পেয়ারা। তার ছয় বিঘা বাগান। কর্মী সাতজন, সেলিম চন্দ্র, বেলাল ভূঁইয়া, যুগল, রতন, সুবোধ ও অনু। ভোগান্তি তিনি ভালোই টের পেয়েছেন পণ্য পাঠাতে গিয়ে। জানালেন, কর্মীপ্রতি দৈনিক সাড়ে ৩শ’ করে টাকা দিতে হয়। খচর আছে বাগানেও। এছাড়া মোড়কজাত খচর, যাতায়াত খরচে যে ব্যয় হয় তাতে বিভিন্ন স্থানে পেয়ারা পাঠালে লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখেই বেশি পড়তে হয়। এ থেকে অনেকখানি মুক্তি পাওয়া সম্ভব যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করে, মত নিরণ চন্দ্র রায়ের।

যোগাযোগ ব্যবস্থা বিষয়ে ৫নং কীর্তিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ভীমরুলী থেকে কীর্তিপাশা হয়ে ঝালকাঠি শহর যেতে মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ। এই সড়ক পুরোটাই ভালো। কোনো সমস্যা নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু নিজের উদ্যোগে সড়কটি করে দিয়েছেন। এ পথ ধরে সোজা ঢাকায় চলে যাওয়া যায়।

তিনি আরও দাবি করেন, বর্তমানে সড়কটিতে বড় বাস না চললেও, আগামী পেয়ারা মৌসুমের আগেই এখানে বাস চলবে। এতে যেমন সহজ হবে পণ্য পরিবহন, সেই সঙ্গে আসবেন আরও দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও। এছাড়া কুড়িয়ানা-আটঘরের পণ্যও তার ইউনিয়নের রোড দিয়ে যেতে পারে এমন অভিমতও প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান রহিম।

তবে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভীমরুলীর পর ডুমুরিয়া, খেজুরা পর্যন্ত সড়ক তেমন ভালো নয়। এখানে ইটের রাস্তার সড়ক। এ নিয়ে এলাকার পেয়ারা চাষি-ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা দাবি জানান, সড়কটি ধরে যেন একটি ভালো রুট করা হয়। যাতে খুব সহজেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পেয়ারাবোঝাই বড় বড় ট্রাক পাঠানো যায়। এতে ভরা মৌসুমে যতই পেয়ারা উৎপাদন হোক না কেন, তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে রফতানিরও।

পেয়ারা সংরক্ষণে এই এলাকায় একটি হিমাগার প্রয়োজন এমন দাবি করে নেসারাবাদ স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র মো. শফিকুল ইসলাম ফরিদ বাংলানিউজকে বলেন, স্বরূপকাঠিতে না হোক, কুড়িআনা-আটঘর কিংবা ভীমরুলীতে যদি একটি ‘পেয়ারা হিমাগার’ হয় তবে এসব এলাকার হাজার হাজার চাষি, বাগানি, ব্যবসায়ী, আড়তদার, মোকাম মালিকরা উপকৃত হবেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দ্রুত না পাঠাতে পারারও ভয় থাকবে না।

শুধু পেয়ারা নয়, স্বরূপকাঠি থেকে ভীমরুলী পর্যন্ত এলাকায় আমড়া, সুপারি, কলা, পেঁপে, কাকরোল, কচু, সিম, বরবটি, লেবু, তাল, আখ, নারিকেলসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হয় প্রচুর। বিপুল সম্ভাবনা প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আর তাই তো এখনই এ এলাকার নূন্যতম যোগাযোগ উন্নতি না ঘটাতে পারলে সৌন্দর্য যেমন ক্ষতির শিকার হবে, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে না সঙ্গে খাদ্য চাহিদায় আবদান আসবে না এমনই মত সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫
আইএ

** ঢাকায় কেজি ৪০, এখানে মণ ৪০!
** থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম নয় ‘ভীমরুলী’
** নৌকায় ভাসা বিশাল বাজার...
** এই পেয়ারার স্বাদই আলাদা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।