ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আমন ধানের চারার সঙ্কট

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫
আমন ধানের চারার সঙ্কট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর, গাইবান্ধা থেকে: অতিবৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে রোপা আমন ধান খেত। এসব জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো চাষাবাদ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত চারা পাচ্ছে না চাষিরা।

ফলে চলতি মৌসুমে জমিগুলো পতিত রাখতে হচ্ছে।
 
একাধিক চাষি অভিযোগ করে জানান, যাদের কাছে চারা পাওয়া যাচ্ছে তারা বেশি দাম রাখছে। চারার মানও তেমন ভালো না। কৃষি অফিস থেকে বলা হচ্ছে, নতুন করে ধান লাগানোর কথা, কিন্তু তারা সবাইকে চারার ব্যবস্থা করে ‍দিতে পারছে না।
 
চাষিরা পর্যাপ্ত চারা পাচ্ছেন না -বিষয়টি স্বীকারও করলেন কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা। তবে, চারার এ সঙ্কট দ্রুত কেটে যাবে বলে জানান তারা।
 
রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের (ডিইএ) মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, গত সপ্তাহ থেকে ডিইএ’র চারা বিতরণের কাজ চলছে। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চারা বিতরণ শুরু হবে। আগে আসলে আগে পাবেন -এই নীতিতে চারা বিতরণ করা হবে।
 
গত কয়েক দিন রংপুর বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া আবাদি জমির অধিকাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় এসব জমিতে দ্বিতীয় বারের মতো ধানের চারা রোপনের সুযোগ আছে। আর কিছু কিছু জমিতে পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় ধানগাছগুলো কিছুটা জেগে উঠেছে।
 
শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শেখ জব্বার ও সোলেমান নামে দুই চাষির মধ্যে তর্ক চলছিল। কাছে গিয়ে জানা গেলো, শেখ জব্বার বলছেন, জমিতে পানি সরে গেছে কিন্তু চারার অভাবে ধান লাগাতে পারছেন না।
 
আর সোলেমান বললেন, 'টাকা থাকলি চারার অভাব নাই। কত চারা লাগবি তোমার?' তাদের তর্কের মাঝে আরও কয়েকজন উপস্থিত হলেন। তাদের মধ্যে জহুরুল ইসলামের দাবি, পর্যাপ্ত চারা পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও মানের দিক দিয়ে ভালো না, আর দামও বেশি।
 
এদিকে উঁচু জমির ধান বেশ ভালো আছে। এসব ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতেই মন ভরে যায়। বিশেষ করে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মূল সড়কের পাশে জমিগুলোর ধান এখনো অনেক ভালো আছে।
 
গাইবান্ধা উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ফুলু শেখ জানান, তিনি এক একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। এর মধ্যে কয়েক শতক জমির ধান ভালো আছে। আর বাকি জমির পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এই ধান ঘরে তুলে আগামী বছরের খাবারের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন তিনি।
 
ফুলু শেখ বলেন, অনেক জমির ধানের পানি সরে গেলেও চারা না পাওয়ায় ধানের জমিগুলো পতিতই রাখতে হচ্ছে। এখন উপায় না পেয়ে আলু চাষের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
 
পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারি এলাকায় গিয়ে একই অভিযোগ পাওয়া গেলো। পানি সরে গেলেও চারার অভাবে ধান লাগাতে পারছেন না কৃষকরা।
 
আশরাফুল নামে এক কৃষক জানান, এবারই প্রথম কৃষি অফিস থেকে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হলো। কিন্তু কোনো সমাধান দেওয়া হলো না। তারা এখন কী করবেন, কী করলে ভালো হয় -এসব বিষয়ে কিছু বলা হলো না।
 
এ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, পর্যাপ্ত চারা পাওয়া গেলে অনেকেই ধান লাগিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু কারও কাছে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
 
ডিইএ সূত্র বলছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চারা বিতরণ করা হবে। প্রায় ৭০ একর জমির চারা পাবেন কৃষকরা। এখান থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ধান লাগানো যাবে।  
 
ডিইএ মহাপরিচালক জানান, তিনি কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করেছেন। কৃষকরা অন্যান্য সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি রবিশস্যের জন্য দ্রুত বীজ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।
 
মাঠে বিকল্প ফসল উৎপাদনে তাদের প্রস্তুতি আছে বলে জানান এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে কৃষকদের আগ্রহের দিকগুলো প্রাধান্য দিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 
তবে কৃষকরা জানান, নিচু জমিতে চলতি মৌসুমে আর কোনো আবাদ করার সুযোগ নেই। তাই চারা পাওয়া গেলে তারা আবারো জমিতে ধান লাগাতে চান। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করলে ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব।
 
রোপা আমনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সঠিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা যেন প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে যদি কোনো সহযোগিতা দরকার হয় তাহলে যেন ক্ষতিগ্রস্তরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আগে সুবিধা পায় সে দাবিও জানিয়েছে কৃষকরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫  
একে/এমজেড

** দু’দিনের বৃষ্টিতে রংপুরে কৃষির সর্বনাশ

** রংপুরে ৮২ হাজার হেক্টর জমি প্লাবিত, ক্ষতি ৭৬৫ কোটি টাকা
** অতিবৃষ্টিতে মুছে গেছে রংপুরের ধানচাষিদের হাসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।