ঢাকা, শনিবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মেডিকেল ভর্তি

প্রশ্নপত্র ফাঁস করেই কোটিপতি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
প্রশ্নপত্র ফাঁস করেই কোটিপতি! ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সমাধানসহ অবৈধ উপায়ে ভর্তিতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন জসীম। পরিচিতদের মধ্য থেকে এ ধরনের পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে জসীমের কাছে বুঝিয়ে দিতেন সানোয়ার ও তুষার।

আর অসাধু পরীক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নপত্রের ওপর কোচিং করাতেন ডা. শোভন।

এভাবেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে আসছিলেন একটি জালিয়াত চক্রের ওই চারজন। অবশেষে তারা ধরা পড়ে র‌্যাবের কাছে ভয়াবহ এ জালিয়াতির কথা স্বীকারও করেছেন। কোটিপতি বনে যাওয়া চক্রটির কাছ থেকে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওই চারজনকে আটকের পর বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।  

আটককৃতরা হলেন- জসীম উদ্দিন(৪১), ডা. জেড এম এ সালেহীন শোভন(৪০), এস এম সানোয়ার(৩০) এবং আকতারুজ্জামান খান তুষার(৩৮)।    

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এ চক্রের মূল হোতা জসীম উদ্দিন ও ডা. শোভন।

র‌্যাব জানায়, রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচ এলাকার একটি বাসায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় আটককৃতদের কাছ থেকে দু’টি মডেল প্রশ্নের ৮৮ কপি প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি চেক ও নগদ ৩৮ হাজার টাকাসহ মোট ১ কোটি ২১ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে এ চক্রের মূল হোতা জসীম উদ্দিন ও ডা. জেড এম এ সালেহীন দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন তারা।

চক্রের মূল হোতা জসীমকে এর আগেও ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতির কারণে ওই চক্রের ২০ সদস্যের সঙ্গে র‌্যাব গ্রেফতার করেছিলো।

জিজ্ঞাসাবাদে জসীম জানান, সাধারণত পরীক্ষার দু’একদিন আগে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতেন তিনি। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার আগে একসঙ্গে সমবেত করে সরবরাহ করতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে বাসায় গিয়ে প্রশ্নপত্র সমাধানসহ পৌঁছে দিয়ে আসতেন।

গ্রেফতারকৃত অপর আসামি এস এম সানোয়ার ই. হক কোচিংয়ের একজন শিক্ষক ও আকতারুজ্জামান খান তুষার লাইলী-আবেদ কনষ্ট্রাকশন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। পরিচিত লোকজনের মধ্য থেকে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে মূল হোতা জসীম উদ্দিনের কাছে তাদের বুঝিয়ে দিতেন ওই দু’জন।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, ডা. সালেহীন ২০০৬ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ডাক্তারি পেশায় নোয়াখালীতে নিয়োজিত ছিলেন বলে আমরা জানতে পারি।

তিনি বলেন, ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কৌশলে অবৈধ উপায়ে ভর্তিতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করা এবং তাদেরকে প্রশ্নপত্রের ওপর কোচিং করানোই আসামি ডা. জেড এম সালেহীন শোভনের মূল কাজ ছিলো।

প্রতারক চক্রটি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্যাকেজের কথা বলে আর্থিক চুক্তি করত। আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে এ চক্রটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতো বলেও জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‍্যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এসজেএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।