ভোলা: দুই দফা বাঁধের ভাঙনে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে রয়েছে ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর ও দক্ষিণ রাজাপুর নামে দু’টি গ্রাম।
পানিতে প্লাবিত হয়েছে বসতঘর, পুকুর, মাছের ঘের ও ফসলি জমি।
পানিবন্দি হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে হতাশায় পড়েছেন বানভাসি মানুষ।
জানা গেছে, এক সপ্তাহে দুই দফা বিকল্প বাঁধ ভেঙে প্লাবিত রাজাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ। জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা এলাকার মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। একদিকে নদী ভাঙন অন্যদিকে জোয়ারের পানির সমস্যায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
বসতঘর, পুকুর, মাছের ঘের ও ফসলি জমি হারিয়ে পথে বসেছেন এসব পরিবারগুলো। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন তা জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। পানির কারণে অনেকে রান্না-বান্নাও করতে পারছেন না।
বানভাসি নুরজাহানের ছবি তুলতে গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা উঁচু স্থানে থাকেন তারা কিভাবে বুঝবেন আমাদের দুঃখ-দুর্দশা। গরিবের কোনো নিরাপত্তা নেই, তাই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
গৃহবধূ সুরমা (৩০) বলেন, নদীতে ১০ কড়া জমি গেছে, বাকি ছিলো ঘরভীটা কিন্তু সেটা পানিতে ভাসছে। তাই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু কোথায় আশ্রয় নিবো জানিনা?
আলমগীর মিঝি বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছের ঘের তৈরি করেছি, কিন্তু পানিতে সব শেষ হয়ে গেছে।
নুরু মাতাব্বরের স্ত্রী মরিয়ম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তিন ছেলের মধ্যে একজন অসুস্থ বাকি দু’জন আমাদের খোঁজ খবর নেয়না। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে নদীর তীরে রয়েছি, তাও ভাঙনে ঘরটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জোয়ারের পানি ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। আমাদের সহায়-সম্বল বলতে ৫ গন্ডা জমি ছিলো, তাও শেষ।
বানভাসি এলাকার দুর্গত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকা তলিয়ে রয়েছে। জোয়ারের পানির হাত থেকে বাঁচতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে উঁচু স্থানে বাঁধে ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন পরিবারের লোকজন। কেউ কেউ ভাঙন আতঙ্কে ঘরভীটা ভেঙে নৌকায় করে সরিয়ে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ মানুষের চোখে-মুখে দুঃশ্চিন্তার ছাপ। সর্বহারা পরিবারগুলো নতুন করে কোথায় আশ্রয় নেবেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দিয়েছেন, আরো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে, ভাঙন থেকে রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ইলিশা, রাজাপুর ও ভোলা বাঁচাও’ সংগ্রাম কমিটি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ঘেরাও ও গণ অনশন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলে কমিটির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
কমিটির আহ্বায়ক সায়েদ আলী ও সদস্য সচিব নুরে আলম বলেন, প্রথমে মানববন্ধন কর্মসূচি করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা প্রেসক্লাব চত্বরেও একইভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়ায় পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলতেই থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
আরএ