ঢাকা: সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে ইরান। বাংলাদেশে সফর শেষে নিজ দেশে ফেরার আগে একথা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়ার আগে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভয়েজি উপস্থিত ছিলেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সংক্ষিপ্ত সফরকালে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে তার সফর নিয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে জাভেদ জারিফ বলেন, ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘের অবরোধ উঠে গেলে জ্বালানি ও তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ-ইরানের সম্পর্ক জোরদার হবে।
বাংলাদেশ ও ইরানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যৌথ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খুব শিগগিরই ইরান সফরে যাচ্ছেন বলেও জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিরিয়া-ইয়েমেনের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গেও সংবাদ সম্মেলনে আলোচনা করেন তিনি। জাভেদ জারিফ বলেন, যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড চালায় তারা ধর্মের বিরুদ্ধে। তাদের উদ্দেশ্য কোনো পক্ষের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা, ধার্মিক হওয়া নয়। অস্ত্র প্রয়োগ কিংবা যুদ্ধ নয়, আলোচনার টেবিলে বসে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতাই সিরিয়া, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আনবে।
সফরকালে তিনি ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সাম্প্রতিক পারমাণবিক চুক্তি সম্পর্কেও অবহিত করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির ক্ষেত্রে ইরান তার অবস্থান ও নীতি অটুট রেখেছে। জনগণের স্বার্থ রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ চুক্তিতে কোনো পক্ষই হারেনি, বরং উভয়পক্ষই জয়ী হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ইরান যৌথভাবে কাজ করবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে দুটি দেশই ধর্মের অন্তর্নিহিত শান্তির আদর্শে বিশ্বাসী, কোনো অবস্থাতেই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না।
সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের মিত্রদের দ্বৈত নীতির কারণেই সিরিয়া, ইয়মেনে সংকট সৃস্টি হয়েছে। সিরিয়া এবং ইয়েমেনের জনগণকেই তাদের সমস্যার সমাধানের সুযোগ দেওয়া উচিত। তৃতীয় পক্ষের বোমা হামলা কিংবা যুদ্ধাবস্থা চাপিয়ে সমস্যার সমাধান না করে সংকট আরও গভীর করছে।
তিনি বলেন, আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইরান বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কোনো সুবিধা আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করেনি। তবে ইরানে ভ্রমণ এবং প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রচলিত অভিবাসন আইন অনুসরণ করা হয়।
বাংলাদেশি পেশাজীবীদের ইরানে নিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে ইরানে যেহেতু প্রচুর দক্ষ বেকার আছে, সেহেতু বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক নেওয়ার আপাতত সুযোগ নেই বলেও জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
জেপি/এমজেএফ