ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হাইব্রিড রাজনীতিবিদ-সাংবাদিক নিয়ে শঙ্কায় সেতুমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
হাইব্রিড রাজনীতিবিদ-সাংবাদিক নিয়ে শঙ্কায় সেতুমন্ত্রী

ঢাকা: রাজনীতিতে ‘হাইব্রিড’ নেতার মতো সাংবাদিকতা পেশাতেও ‘হাইব্রিড’ সাংবাদিকদের নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

‘হাইব্রিড’ সাংবাদিকরা যেন পেশাদার সাংবাদিকদের কোণঠাসা করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন এককালের সাংবাদিক-ছাত্রনেতা, বর্তমানের এই মন্ত্রী।


 
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে ‘জনপ্রশাসন ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
 
তিনি বলেন, হাইব্রিড শুধু এখন রাজনীতিতে নয়, হাইব্রিড এখন সাংবাদিকতায়ও। শুধু মফস্বলে নয়, ঢাকাতেও আছে। পরিচয়পত্র লাগিয়ে ঘুর ঘুর করছে। খুব ব্যস্ত! আরে কী ব্যাপার! এত ব্যস্ততা কীসের, জানতে চাইলে বলে- আমি সাংবাদিক। অ্যাই অ্যাম এ জার্নালিস্ট; খুব ভাব নিয়ে বলে এ কথা। এরপর কোন কাগজে আছেন, কোন মিডিয়ায় আছেন জানতে চাইলে বলেন- ফ্রিল্যান্স। এ রকম অনেক সাংবাদিকই আছেন। মফস্বলে অনেকেই ডিসি-এসপির অফিসে বসে থাকেন, এমন কিছুও আছে।
 
তবে সব সাংবাদিক এমন নয় জানিয়ে ওবায়দুল  কাদের বলেন, আমি কিন্তু সাংবাদিক কমিউনিটির ওপর অ্যাটাক করছি না। এই কমিউনিটির ওপর অ্যাটাক করলে আমি তা মেনেও নেবো না। সাংবাদিকতার নামে ‘হাইব্রিড সাংবাদিকতা’ চলছে।
 
তিনি বলেন, ‘হাইব্রিড’ রাজনীতিতেও চলছে! বিলবোর্ড দেখলে মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর একটা ছবির সঙ্গে ৩৭টা ছবি; গুণে দেখেছি। এরা কারা, কোত্থেকে এলো এরা!

বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। আবার সাংবাদিক উৎপাদনেরও কারখানা। প্রতিদিন নতুন নতুন সাংবাদিক দেখি। কোত্থেকে আসলো! যারা রিয়েল জার্নালিস্ট, কষ্ট করেন, লেখাপড়া করেন তাদের এসব সাংবাদিক দেখলে খারাপ লাগে। যেমন, আমাদের পলিটিশিয়ানদের হাইব্রিড দেখলে খারাপ লাগে!
 
ওবায়দুল কাদের বলেন, হাইব্রিড সাংবাদিকরা যেন ভালো সাংবাদিকদের কোণঠাসা করতে না পারেন!

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ইকবাল ভাই! ডোন্ট মাইন্ড!
 
বক্তব্যের মাঝে বিরতি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আর কথা বলবো না। এখন আর ভালো কথা নেই। ভালো কথার স্টক ফুরিয়ে গেছে। এখন আর গোডাউনে কোনো ভালো কথা নেই। এদেশে ভালো কাজের দৃষ্টান্ত খুব কম। যেই একটা মাইক পায়, ভাষণ দিতে শুরু করে!
 
মন্ত্রী বলেন, এখন সব জায়গায় ওয়াল হয়ে যাচ্ছে, ওয়াল, ওয়াল। জাতীয় প্রেসক্লাব দুইভাগ হয়ে গেছে; যা জীবনেও দুইভাগ ছিল না। সিলেটে দুইভাগ। ঘরও দুইটা। এখানে (ঢাকা, জাতীয় প্রেসক্লাব) মশারির মধ্যে মশারি। রাজশাহীতে গিয়ে শুনলাম তারা চার ভাগ। হাইব্রিড মানসিকতা বেশি করে গ্রো করেছে; ওয়াল বেশি করে উঠছে। পদ্মাব্রিজ তৈরি হচ্ছে; কিন্তু আমাদের সম্প্রীতির সেতু তৈরি হচ্ছে না!
 
সচিবালয়ে তদবিরবাজদের ভিড়ে নিজে মাঝে-মধ্যে পালিয়ে যান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, করিডোর দিয়ে চলতে পারি না! এই তদবিরের চাপে অনেক সময় রাস্তায় ঝুঁকে পড়ি। এর চেয়ে রাস্তাই ভালো। ওখানে একটু কাজ করি। ফাইল বাসায় নিয়ে আসি। সড়ক ভবনে, সেতু ভবনে, সংসদ ভবনে আমার অফিস আছে। সেখানে ফাইল নিয়ে যাই, সই করি। যখন দেখি, এখানে আর বসতে পারছি না, যদি ঠাণ্ডা মাথায় ফাইল সই করতে না পারি!
 
আওয়ামী লীগের এই নেতা খানিকটা সামলে নিয়ে বলেন, তবে আমার এখানে তদবিরটা কিছুটা কমে গেছে। কিছু লোক আমাকে দেখলে পালায়। কারণ, আমি তো সবাইকে চিনি। এত অদ্ভুত অদ্ভুত, উদ্ভট উদ্ভট তদবির আসে ভাবতেও অবাক লাগে!
 
কোনো মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-সচিব সৎ হলে ওই মন্ত্রণালয়ের ৫০ শতাংশ দুর্নীতি এমনিতেই কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তবে আশপাশের লোক অপকর্ম করলে মন্ত্রী নিজেকে সৎ দাবি করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
 
সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের তৈরি ফাইলের মান অনেক নিচুতে চলে গেছে মত প্রকাশ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, শুদ্ধ ফাইল খুব একটা পাই না। পড়লে আমি খুবই হতাশ হই। যারা বিসিএস কোয়লিফাই করে, তাদের পড়াশোনার মান এত নিচে কী করে হয়!
 
অনুষ্ঠানের সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন রেখে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওবায়দুল কাদের।
 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমকে তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। তার আমলেই অবাধ তথ্য প্রবাহের আইন প্রণয়ণ করা হয়েছিল। আগে মানহানির মামলা হতো। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার বিধান ছিল। বর্তমান সরকার তা বাতিল করেছে।
 
তিনি বলেন, প্রযুক্তির বিকাশের কারণে কেউ আর পত্রপত্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আজকে অনলাইন, ফেসবুক, টুইটার এসেছে। সবকিছুই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কারণে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছে।
 
মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত এলে এবং গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা। শুধু নেতিবাচক সংবাদ নয়, ইতিবাচক সংবাদও পরিবেশন করার আহ্বান জানান তিনি।
 
সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য দু’দিন ব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
 
বিভিন্ন সেশনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশারারফ হোসাইন ভূইঞা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার সচিব আব্দুল মালেক, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদসহ কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এমআইএইচ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।