ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জেগে যাত্রীরা, ঘুমে রেলওয়ে!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
জেগে যাত্রীরা, ঘুমে রেলওয়ে! ছবি: কাশেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বছরের অন্য সময়গুলোর কথা না হয় বাদই দেওয়া হলো। কিন্তু ঈদের সময় তো চাহিদা বেশি থাকে।

তাহলে সারারাত দাঁড়িয়ে থেকে সকাল-দুপুরের মাঝামাঝিতে কেন যাত্রীরা টিকিট পাবেন? ওদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তারাই বা কেন ঘুমুবেন!
 
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে কমলাপুর রেল স্টেশনে এমন অভিযোগ করছিলেন শিক্ষার্থী অয়ন খান।

বললেন, রাত নয়টায় স্টেশনে এসেছি। কেননা দেরিতে এলে লাইনের সিরিয়ালও হবে পরে, টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তাও কম।

‘কিন্তু কাউন্টার খুলবে সেই সকাল নয়টায়। এ কেমন কথা? যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকবেন সারারাত ধরে, আর রেলওয়ে ঘুমোবে?’

ঈদে বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিট নিতে আসা আরেক ব্যক্তি আবুল হোসেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যাবেন গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। তাই আগের দিন থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে ২৪ ঘণ্টা টিকিট কাউন্টার খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হোক। কেননা মানুষের চাহিদা আছে, যা স্টেশনের পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়।
 
শুধু আবুল হুসেনই নয়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত অনেকেই এমন দাবি জানালেন। তাদের ভাষ্যমতে, ‘এই লম্বা সিরিয়াল ধরার সুযোগটাই থাকা উচিত নয়। ২৪ ঘণ্টার সার্ভিস দেওয়া হলে সারারাত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন পড়বে না। ’
 
সরেজমিন দেখা যায়, যাত্রীরা ক্লান্তি আর ঘুম কাটাতে তাস নিয়ে মেতেছেন। কেউ খেলছেন দাবা, আছে লুডুও। ছেলে-বুড়াদের পাশাপাশি মেয়েরাও বাদ যাচ্ছেন না এই খেলা থেকে।

মা-মেয়ে মিলে খেলছেন সাপ-লুডু। অনেকেই আবার পত্রিকা পড়ছেন। কেউবা মেঝে পত্রিকা বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন। অনেকেই মেতে উঠেছেন দল বেঁধে গল্পে। আর সব আয়োজনই কেবল কষ্ট লাঘবের জন্য।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর‌্যন্ত। এরপর থেকেই যাত্রীরা লাইন ধরার সুযোগ খোঁজতে থাকেন। সুযোগ এই জন্য যে, সাধারণ যাত্রীদের কাউন্টার এমনিতে রাত সাড়ে ১০টা পর‌্যন্ত খোলা থাকে। তাই এই সময়ের মধ্যে সব কাউন্টারে দাড়ানোও যায় না।
 
এদিকে স্টেশনের বিশাল দেওয়ালে টাঙানো নোটিশ বোর্ড থেকে জানা গেলো, কমলাপুর থেকে রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে সর্বশেষ ট্রেন ছেড়ে যায়। এছাড়া রাতের শেষের দিকে দিনের সর্বপ্রথম ট্রেনটি ছাড়ে ৫ টা ১০ মিনিটে।
 
অন্যদিকে দিনের সর্বপ্রথম ট্রেনটি আসে ভোর ৪ টা ৪৫ মিনিটে। সর্বশেষ ট্রেনটি আসে রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে।

ট্রেনের সময়সূচি বিবেচনাতে সাধারণ ক্ষেত্রেই কাউন্টার একঘণ্টা আগে বন্ধ হয়। খোলা হয় ভোর ৫ টার দিকে। অর্থাৎ সাধারণ সময়ে ৬ ঘণ্টা সেবা বন্ধ থাকে। আর বিশেষ সময়ের জন্য যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে সময় সেবা দেওয়া হয় ৮ ঘণ্টা, সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর‌্যন্ত। অর্থাৎ দিনে ১৬ ঘণ্টা বিশেষ সেবা বন্ধ থাকে।
 
‘যা রীতিমত দুর্ভোগ সৃষ্টির সিস্টেম’ মন্তব্য করেন ময়মনসিংহের এক যাত্রী শাসমুল আলম।

তিনি বলেন, যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর কর্তৃপক্ষ ঘুমায়। এই রীতি বন্ধ হওয়া উচিত। অন্তত ঈদের সময়ের জন্য হলেও।
 
এ নিয়ে বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা প্লাটফরম স্টেশন মাস্টারের দায়িত্বে থাকা একজনের সঙ্গে।

নাম জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে সবই সম্ভব। তবে এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তারা যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। তবে যাত্রীদের কষ্টের কথা বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
ইইউডি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।