ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

পাঁচ পয়েন্টে তীব্র যানজটের আশঙ্কা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
পাঁচ পয়েন্টে তীব্র যানজটের আশঙ্কা ছবি: সোহাগ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে: ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে মহাসড়কের ওপর নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ঈদের আগ মুহূর্তে অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ত এই মহাসড়কের মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বেশ কিছু মানবসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

এ কারণে আসন্ন ঈদুল আযহার সময় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সড়কে শৃঙ্খলা বলতে যেন কিছুই নেই। একদিকে কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে চলছে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং অন্যদিকে চলছে যেখানে সেখানে বাসস্টপেজ বানিয়ে ফেলার কর্মযজ্ঞ। সড়কের ওপর রয়েছে ময়লার ভাগাড়, রোড ডিভাইডার ভেঙে হেঁটে পারাপারের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

লোকাল সার্ভিস বা টাউন সার্ভিসগুলো এসবের সুবিধা পেলেও দূরপাল্লার বাস চালকরা খুব শঙ্কিত। তারা বলছেন, এখনই মহাখালী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক। এই অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের দুদিন আগে থেকেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে। এতে চৌরাস্তা পর্যন্ত আসতে ৫-৬ ঘণ্টা সময়ও লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
 
ময়মনসিংহগামী আলম এশিয়ার চালক মোহাম্মদ মোশারফ বলেন, সড়কের ওপর প্রশাসনের এখনই নজর দেওয়া উচিত। অন্যথায় ঈদের আগে সামাল দেওয়া যাবে না।
 
সম্ভাব্য যানজট নিয়ে শঙ্কিত যাত্রীরাও। পরিবারের কিছু কিছু সদস্য আগেভাগেই চলে যাচ্ছেন। কিন্তু বাকিরা সময়মতো বাড়ি যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
 
আব্দুল্লাহপুরে বাসের জন্য অপেক্ষমান রহিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি শেরপুরে যাচ্ছি। ঝামেলা এড়াতে পরিবারের মেয়েরাই আগে যাচ্ছি। স্বামী-ছেলেরা ঈদের দুদিন আগে যাবে, তখন তারা ঠিকমতো যেতে পারবে তো?

সড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা থেকে গাজীপুরের দূরত্ব মাত্র ৩৭ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে কোনোভাবেই দেড় ঘণ্টা সময় লাগার কথা নয়। অথচ কোনো উৎসব ছাড়াই কখনও কখনও এ পথ পাড়ি দিতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যায়।
 
মহাসড়কে ঘুরে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ, টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস)  সামনে, টঙ্গী কলেজ গেট, ভোগড়া বাইপাস ও গাজীপুর চৌরাস্তায় ব্যাপক অব্যবস্থাপনা। ফলে এই পয়েন্টগুলোতেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
 
আব্দুল্লাহপুর ব্রিজের আশেপাশ দেখে বোঝার উপায় নেই-এটা সড়ক, না কোনো বাসস্ট্যান্ড। এখানে রাস্তার ওপর বাস দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠা-নামা করানোয় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়তই।
 
টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) সামনে বা টঙ্গী রেলগেট এলাকার ওভারব্রিজের নীচেও তালগোল পাকানো যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানেও যানজটের অন্যতম কারণ যত্রযত্র গাড়ি পার্কিং আর যাত্রী নামানো-ওঠানো।

টঙ্গী কলেজ গেটের সামনের সড়ক যানজটের একটি পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো উৎসব ছাড়াও এখানে প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা যানজট বাঁধে। এর দুটি কারণ লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমত, এই পয়েন্টিতে একটি বিশাল আকারের গর্ত রয়েছে। এজন্য ময়মনসিংহগামী যেকোনো গাড়ি এসে ব্রেক কষে, আর এই সুযোগে সাধারণ লোকজনও রাস্তা পারপার শুরু করে দেন। আর এই মওকা পেয়ে অনেক গাড়ি আবার ইউটার্ন নেওয়ার চেষ্টা করে। এরফলে একটি ভজকট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
 
ভোগড়া বাইপাস পয়েন্টেও যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এই চৌরাস্তা থেকে একটি সড়ক গাজীপুরে, একটি চট্টগ্রাম ও একটি টাঙ্গাইলের দিকে গেছে। ফলে ট্রাক থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের পরিবহন চলাচল করে এখান দিয়ে। এছাড়া মোড়েই টাউন সার্ভিসগুলো যাত্রী নেয়। অন্যদিকে পথচারীরাও রাস্তা পার হন। ফলে গাড়ির চাপ একটু বাড়লেই এখানকার যানজট নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
 
অন্যদিকে গাজীপুর চৌরাস্তার যানজট প্রায়ই কোনোদিন দীর্ঘ হতে হতে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত চলে আসে। এর অন্যতম কারণ টাউন সার্ভিস। চৌরাস্তায় সড়কের প্রায় মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে পরিবহনগুলো যাত্রী নেয়। ফলে দূরপাল্লার বাস বা ট্রাক মোড় ক্রস করার সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রিকশা, থ্রি-হুইলার যান তো রয়েছেই। ক্ষুদ্র যানগুলি হুট করেই এদিক-ওদিক যানের অগ্রভাগ ঢুকিয়ে দিলে বড় গাড়িকে গতি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
 
তবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে পরিবহন সমিতির পক্ষ থেকে মাইকে অনবরত নির্দেশনা দেওয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে গাজীপুর চৌরাস্তায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। একদিকে মাইকে ঘোষণা আসছে সরে যাওয়ার জন্য, অন্যদিকে চালক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে জানালা দিয়ে বাইরে। হেলপার-কনডাক্টর ডেকে চলেন যাত্রীদের।
 
এ নিয়ে কথা হয় স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের আরও ৯ দিন বাকি, এখনই এত বিশৃঙ্খলা। ঈদের দিন ঘনিয়ে এলে কী যে বিশৃঙ্খলা হবে কে জানে!
 
এদিকে বোর্ড বাজার এলাকায় মহাসড়কের ওপর তৈরি করা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। ডাস্টবিন নেই, ময়লা ফেলতে ফেলতে পুরো সড়কের অর্ধেকের বেশিরভাগই যান চলাচলের অনুপযোগী করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া রোড ডিভাইডার ভেঙে ৩০টির মতো জায়গায় করা হয়েছে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা। ফলে ছুটন্ত গাড়ির সামনে দিয়েই অনেকে এপার থেকে ওপার যাচ্ছেন। আবার সেই ফাঁক গলে হুট করে রিকশাও বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রাণহানির শঙ্কা বাড়ছে, তেমনি গাড়ির গতি কমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

যাত্রী থেকে শুরু করে দূরপাল্লার গাড়ি চালকরাও তাই এখনই সমন্বিত উদ্যোগ চান। যেন ঈদ উপলক্ষে এখন থেকেই সড়ক প্রস্তুত রাখা হয়। কেননা, এই সময়ের চেয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ গুণ গাড়ি বেড়ে যাবে ঈদের আগ মুহূর্তে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।