ঢাকা: স্রষ্টার মেহমান হয়ে তীর্থস্থানে যেতে সারা দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মানুষ যে স্রোতে নিজেকে মিশিয়ে দেন, আল্লাহর সান্নিধ্য পেতেই মুহাম্মদের (সা.) রওজা জিয়ারত এবং পবিত্র হজব্রত পালনে সেই ধর্মপ্রাণ মানুষের স্রোত গিয়ে ঠেকেছে রাজধানী ঢাকার আশকোনায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিনগত মধ্যরাতে আশকোনার হজ ক্যাম্পে মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ থেকে বয়োবৃদ্ধ শামিল হয়েছেন হজ পালনে মক্কা মনোয়ায় যাওয়া আর নবীজীর রওজা জিয়ারতের জন্য।
এসব হাজারো মানুষের মধ্যে দেখা মেলে সাদেক মাতবরের। প্রায় শত বছর বয়সে জীবনের শেষ সম্বলটুকু থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করে মৃত্যুর আগে তীর্থযাত্রায় যাচ্ছেন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। পবিত্র হজ পালন করে দু’জনই আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে চান।
পরপারের শান্তির আশায় একেবারে শেষ বয়সে এসে কষ্ট করে হজযাত্রায় অংশ নিয়েছেন এই দু’জন। হজ ক্যাম্পের মধ্যে ফ্লোরে আর মানুষদের মতো তিনিও শুয়ে আছেন। তবে একটু ভিন্ন রকমভাবে।
মাতবর শুয়ে আছেন। মাথার উপরে যন্ত্র চালিত পাখা ঘুরছে। তবে ওই বাতাসে স্বস্তি পাচ্ছেন না তিনি। ছেলে (তৃতীয় ছেলে) মফিজুর রহমান (৪৩) পাশে বসে হাতপাখায় বাতাস করছেন বৃদ্ধ বাবার স্বস্তির জন্য।
![](files/haj1_999589291.jpg)
একপাশে ছেলে হাতপাখায় বাতাস করছেন অন্যপাশে শুয়ে আছেন স্ত্রী নুরজাহান বিবি (৯০)। আর মায়ের ওপাশে শুয়ে আছেন প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের মেয়ে শিরিয়া বেগম।
সাদেক মাতবরের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার নাওডোবা ইউনিয়নের হাজি সবদের মাতববরকান্দি গ্রামে। ছেলে মফিজুর রহমান মাতবর বাংলানিউজকে জানালেন, তার বাবার বয়স ১০০ বছরের বেশিই হবে, কম নয়। তাই এই গরমে সুস্থ থাকার জন্য রাতভর বাতাস করছেন।
এত বেশি বয়সে হজে পাঠাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে মফিজুর রহমান মাতবর জানান, আল্লাহ তার হজ কবুল করেছেন। তাই, হজে যাচ্ছেন।
সাদেক মাতবর এবং ছেলে মফিজুর রহমান মাতবরের পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখে তার পরিবারের স্বচ্ছলতা জানতে চাইলে মফিজুর বলেন, সব ভাইবোন স্বচ্ছল নয়। পদ্মাসেতুর কারণে যে জমি ছেড়ে দিয়ে টাকা পাওয়া গেছে, তা দিয়েই বাবা-মার হজ করা। এখন বাড়ির ভিটেটাই রয়েছে। দুই ভাই দেশের বাইরে বাহরাইনে জীবিকার জন্য গেছেন। আমি ছোট একটি ব্যবসা করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই।
বাবা-মায়ের হজের জন্য আমরা ভাইবোন কোনো অর্থ দিতে পারিনি। আর সে সামর্থ্যও নেই। শরীয়তপুরের আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন মফিজুর।
বেশি বয়সে হজ পালনে সক্ষম হবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি আবারও বলেন, আল্লাহ হজ কবুল করেছেন। তাই হজে যাচ্ছেন।
![](files/haj3_835253311.jpg)
শুধু সাদেক মাতবরই নন, অনেকে ষাটোর্ধ্ব বয়সে হজে যাচ্ছেন। তবে হজযাত্রীর বয়সের খাতায় তার ভিন্নতা থাকতে পারে। হজ ফ্লাইটের জন্য সাদা দু’খণ্ড থান কাপড় পরে অনেকেই প্রস্তুত হয়েছেন। আর যারা সকালের ফ্লাইটে যাবেন, তারা শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন আশকোনার হজ ক্যাম্পে।
ক্যাম্প এলাকার একজন চা দোকানি জানালেন, অনেক মানুষই বৃদ্ধ বয়সে হজে যাচ্ছেন। শুনেছি অনেক হাঁটা লাগে, দৌড়াদৌড়ি করা লাগে।
বয়স্ক লোকজন ঠিকমতো আনুষ্ঠানিকতা করতে পারবেন কিনা মন্তব্য করে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বললেন, বৃদ্ধ বয়সে হজ করতে গিয়ে অনেক কষ্ট পাবেন এরা।
সৌদি সরকার এ বছর থেকে ষাটোর্ধ্ব মানুষের হজের বিষয়ে আগে থেকেই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বলা হয়েছে- পবিত্র হজ পালনের জন্য বয়স ৬০-এর নিচে হতে হবে। আর কোনো দেশ হজযাত্রীকে শারীরিক উপযুক্তও ঘোষণা করতে হবে।
হজ ফরজ হওয়ার শর্ত
১. মুসলমান হওয়া, ২. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া, ৩. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪. স্বাধীন হওয়া, ৫. হজের নির্ধারিত সময়ে হজ আদায় করা, ৬. মধ্যম ধরনের ব্যয় হিসাবে সফরের ব্যয় বহনের সামর্থ্য থাকা। যদি হজ পালনকারী মক্কা শরীফে অবস্থান করেন তবুও। ৭. যারা মক্কা শরীফের বাইরে থাকেন তাদের জন্য হজ পালনের শর্ত হলো- মালিকানা বা ভাড়া সূত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্যকিছু ব্যবহারের সামর্থ্য থাকা। যেমন, আমাদের দেশের হাজিরা বিমান ব্যবহার করে থাকেন। তবে কেউ যদি বিনিময় ছাড়া তার বাহন বা সওয়ারি ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তাহলে তা সামর্থ্য হিসেবে গণ্য হবে। যারা মক্কার আশেপাশে অবস্থান করেন, তাদের ওপর তখন হজ ফরজ হয়। যখন তারা কষ্ট সহ্য করে নিজ শক্তিতে পায়ে হেঁটে হজ করতে পারেন। কিন্তু হাঁটতে সক্ষম না হলে সেই ব্যক্তি মক্কার অধিবাসী হোক বা না হোক, তার জন্য অবশ্যই বাহনের প্রয়োজন হবে।
৮. অমুসলিম দেশে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির, হজ ইসলামের একটি রুকন (ফরজ) এ কথা জানা থাকা বা সে ব্যক্তি মুসলিম দেশের অধিবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
এসএমএ/এবি