ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যেন ছিটমহলের বাসিন্দা!

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
যেন ছিটমহলের বাসিন্দা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: গ্রামে নেই পাকা রাস্তা, সেতু-কালভার্ট। পাহাড়ি ছড়া-খালে মেঠোপথগুলো বিচ্ছিন্ন।

বর্ষায় পানিতে নিমজ্জিত রাস্তায় চলে না গরুর গাড়িও। এমনই এক দুর্গম অঞ্চল সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন।

গ্রাম জুড়ে মাইলের পর মাইল কাঁচারাস্তা। ছড়া-খাল পারাপারের এই জনপদে মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো।

কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলে কখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বলে মনে হয় না। রাস্তা-ঘাট নেই। নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। তাই ইউনিয়নের অজ পাড়া গ্রামগুলোর লোকজন নিজেদের ছিটমহলের বাসিন্দা বলেই ধরে নেন।

কানাইঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে ১ নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ নদী পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের আটগ্রামের সঙ্গে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থার ন্যায় শিক্ষায়ও পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চল।

বিদ্যাপীঠে যেতে শিশুদের পার হতে হয় একের পর এক সাঁকো। যে কারণে সাঁকো পারাপারের ভয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়েও দু:শ্চিন্তায় থাকেন অভিভাবকরাও।

আসামের কাঁছাড় ও মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় বেষ্টিত উত্তর-পূর্ব দিক। দক্ষিণ ও পশ্চিম সুরমা ও লোভাছড়া নদী বেষ্টিত। সিলেটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সুরমা নদী।

স্থানীয়রা জানান- ইউনিয়নে ডোনা, লোহাজুরি, সোনার খেওড়, কাড়াবাল্লা গ্রাম রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য অনুমান তিন মাইল হলেও পূর্ব–পশ্চিমে প্রায় আট মাইল দৈর্ঘ্যের এলাকা এটি।

ইউনিয়নের বিদ্যাপীঠগুলোর বেশির ভাগ গ্রামের লোহাজুরি ও ডোনা বাজার এলাকায়। তাই অন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রায় ৪ কিলোমিটার কাদামাটি মাড়িয়ে এবং বেশ কয়েকটি সাঁকো পেরিয়ে বিদ্যালয়ের পৌঁছুতে হয়।

তাছাড়া কাদা-জলের মিশ্রণে কাঁচা রাস্তাগুলোরও বেহাল দশা। এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্দশার কথা তুলে ধরে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার শাখার প্রধান প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি দেন লোহাজুড়ি বিদ্যানিকেতনের পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন।

এ ব্যাপারে লোহাজুরি বিদ্যানিকেতনের সভাপতি আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তাঘাট নেই। কালভার্ট না থাকায় বেশ কয়েকটি সাঁকো পেরিয়ে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। যে কারণে জীবনের শঙ্কায় প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে অনেক শিশু।

ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য লোকমান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সর্বক্ষেত্রে এই ইউনিয়নের মানুষ অবহেলিত। সরকার থেকে এ অঞ্চলের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচনে ভোট দেই। আর দেশের ভেতরে থেকেও আমরা যেনো ছিটমহলের বাসিন্দাদের ন্যায় জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।  

আলাপ হয় লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ৫ বারের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান ওরফে কুটু মিয়ার সঙ্গে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ইউনিয়নের মধ্যে ২৫/৩০টি সাঁকো রয়েছে। কোনো পাকা রাস্তা নেই। তাই কাদামাটি মাড়িয়ে আমাদের চলতে হয়। আর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অধরা স্বপ্ন।

ইউপি সদস্য সামসুল ইসলাম বলেন, ১ নং লক্ষ্মীপাশা পূর্ব ইউনিয়নটি সুরমা, লোভাছড়া নদী বেষ্টিত। এটি একটি দ্বীপের মতো। গ্রামের শিক্ষা নিজ গ্রামের প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুনো। গ্রামের কাঁচা রাস্তাঘাটগুলোও বর্ষার পানিতে ভেঙে গেছে। রাস্তার এমনই হাল যেনো গরুর গাড়িও চালানোর উপযুক্ত নয়।

কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একটি দ্বীপের মতো অঞ্চল এটি। ইউনিয়ন জুড়ে ২০ সহস্রাধিক লোকের বসবাস। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষায় পিছিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে হাফিজ আহমদ মজুমদার চেষ্টা করেছিলেন একটি সেতু স্থাপনের। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।

তিনি বলেন, চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে ইউনিয়নের প্রায় ২০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছুলেও ৮০ ভাগ মানুষ সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই সরকার থেকে এই এলাকার মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
এনইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।