পটুয়াখালী: মৌসুম প্রায় শেষ অথচ সাগরে ইলিশের দেখা নেই। ইলিশের আশায় গত ছয় মাসে কুয়াকাটার জেলেরা অন্তত দুইশত কোটি টাকার দাদন নিয়ে এখন মহাবিপাকে।
গত এক মাসে পটুয়াখালীতে সুন্দরী কাঠ বোঝাই বেশ কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলার জব্দের পর বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্বিন মাস শুরু অথচ সাগরে কাঙিক্ষত ইলিশের দেখা মিলছে না। চলতি ইলিশ মৌসুম এভাবেই শেষের পথে এগুচ্ছে। ক’দিন পর আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে ইলিশের প্রজনন মৌসুম। তখন টানা ১৫দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এর ক’দিন পর আবার জাটকা সংরক্ষণের জন্য ইলিশ মাছ সংগ্রহে অনেক বিধি নিষেধ আরোপ হবে প্রায় সাত মাস।
![](files/September2015/September19/patuakhali_jele_ML1_886055416.jpg)
এসব বিষয় মাথায় রেখে গত ছয় মাস ধরে ‘মাছ হবে হবে’ ধারণা করে আড়তদারদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়ে উপকূলের জেলেরা এখন অসহায়।
ইলিশের আকাল থাকায় অনেক জেলে সুন্দরবন থেকে সুন্দরী কাঠ পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সুন্দরবন থেকে একদল দস্যু সুকৌশলে বনবিভাগের কিছু অসাধু স্টাফদের মাধ্যমে আঁতাত করে সুন্দরী কাঠ কেটে নৌকায় ভরে। পরে তা সাগরপথে পাঘরঘাটা হয়ে পটুয়াখালীর পায়রানদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে-এমন ধারণা দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আযম ফারুকীর।
তার মতে, গত এক মাসে পায়রা নদী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২টি ফিশিং ট্রলারবোজাই সুন্দরী কাঠ জব্দ করার পর জেলেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
কুয়াকাটা আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, এ অবস্থায় গত ছয়মাসে শুধুমাত্র কুয়াকাটার আলীপুর মৎস্য বন্দরের ১২৬টি আড়ত থেকেই দাদন দেয়া হয়েছে দুইশত কোটি টাকা দুই শতাধিক ট্রলার মালিককে। যেখানে জেলের সংখ্যা রয়েছে অন্তত দশ হাজার। ইলিশ পাবার আশায় জেলেরা ক্রমাগতভাবে দাদনগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত মাছ না পাওয়ায় অনেকেই দাদনের ভয়ে এলাকাছাড়া। অনেকে আবার পেশা বদল করছে বলে স্বীকার করলেন তিনি।
![](files/September2015/September19/patuakhali_jele_ML2_452378962.jpg)
তবে, মহিপুর ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন গাজী বাংলানিউজকে জানান, মহিপুর এলাকার কোনো জেলে গাছ পাচারের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে অন্য কোনো এলাকার জেলেরা এ পেশায় জড়িত থাকতে পারে।
একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করলেন পটুয়াখালীর উপকুলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আলতাফ হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি জানান, এরকম কোনো অভিযোগ তার কাছে নেই। যদি গাছ পাচারের সঙ্গে বনবিভাগের কেউ জড়িত থাকে তবে তা খুঁজে দেখা হবে।
তিনি আরও জানান, গাছ পাচাররোধে নদীতে টহল ব্যবস্থার জন্য তাদের জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। যদি প্রয়োজনীয় জনবল সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলেই নদীতে টহল ব্যবস্থা জোড়দার করা হবে।
পটুয়াখালী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পায়রা নদীকে আর যেন কোনো চোরাকারবারী সরকারি সম্পদ চুরির রুট হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। সেজন্য বিশেষ অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
পিসি/