ঢাকা: ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে এবার গরু সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু গরু সঙ্কটের সেই কালো মেঘ কেটে গিয়েছে।
যশোরের সীমান্ত উপজেলা শার্শায় গড়ে উঠেছে ১৪শ’র মতো খামার। গরু আসবে না বলে দেড়মাস আগে ভারতীয় শীর্ষ কর্তৃপক্ষের ঘোষণায় বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অপরদিকে দারুণ আশান্বিত হয়েছিলেন শার্শা উপজেলার খামার মালিকরা।
ঈদ সামনে রেখে প্রবল উৎসাহে গরুর পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত দিন পার করেন খামার মালিকরা। এমনকি গোয়ালঘরের চালে পাখা এবং নিচে কার্পেট বিছিয়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রেখে গরুর পরিচর্যা করেছেন খামার মালিকরা।
ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে গরু পাঠিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ দীর্ঘ এক বছর, ৬ মাস কেউ বা ৩ মাস ধরে গরু, ছাগল ও মহিষ বাড়ির খামারে রেখে মোটাতাজাকরণ করেছেন। শার্শার খামারীরা জানান, গত বছর ঈদ-উল-আজহায় ভারত থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যায় গরু আসায় তারা তেমন একটা লাভবান হতে পারেননি।
যশোর সীমান্তের সবচেয়ে বড় গরুর খাটাল পুটখালী, গোগা, দৌলতপুর ও অগ্রভূলেট এলাকা। বেনাপোল থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত সীমান্তসংলগ্ন গ্রাম পুটখালি। সেখানেও গড়ে উঠেছে একাধিক খামার।
পুটখালীর বড় খাটালের মালিক নাসির। তার খাটালে ২শ’র মতো গরু। এরমধ্যে ৬০ ভাগ ভারতীয়। বাকি ৪০ ভাগ দেশীয়। পুটখালী গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সাত বছর আগে গরুর খামার গড়ে তোলেন নাসির উদ্দিন। তার খামার ও খাটালে ভারতীয় অধিকাংশ গরুর দাম দুই লাখের অধিক বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
মাঝে ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্তের পুটখালি দিয়ে গরু আসা হ্রাস পাওয়ায় সীমান্তের কিছু যুবক বেছে নেয় গরু খামারের ব্যবসা।
নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, প্রথমে তিনি মাত্র ২৫টি গরু নিয়ে খামার ব্যবসা শুরু করেন। নাসির জানান, তার এ খামারে প্রতিটি গরুর মূল্য সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা। আছে তিন লাখ টাকার গরুও। প্রতিটি গরুর ওজন ১২ থেকে ১৫ মণের মতো। খামারটিকে তিনি দেশের বৃহৎ গরুর খামার বলেও দাবি করেন।
বর্তমানে তার ২টি খামার রয়েছে। সন্তানের মত খেয়াল রেখে খামারে গরু লালন-পালন করেন। তিনি জানান, ভারতীয় গরু আর স্থানীয় কিছু গরু কিনে পরবর্তীতে ৫ থেকে ৬ মাস নিজ খামারে তা যত্ন নিয়ে লালন পালন করেন তিনি।
তিনি জানান, তার খামারের গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়েছে। এতে তার ভালোই মুনাফা হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গরু খামার ব্যবসায় অনেকেই আসতে উৎসাহিত হবেন।
ভারত থেকে গরু আনেন এমন ব্যবসায়ীরা জানান, ছয় মাস আগে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার গরু আসতো। বিএসএফ’র আপত্তিতে তা কমে যায়। যে কারণে গরুর দাম বেড়ে গিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু ব্যবসায়ীরা যশোরের এ সীমান্তে এসে খাটাল মালিকদের সঙ্গে দর-দাম ঠিক করে গরু নিয়ে যান। পাবনার বড় গরু ব্যবসায়ী মফিদুল বেনাপোল বাজারে বসে জানান, তিনি যশোরের ৭ মাইল পশুহাট থেকে গরু কিনেছেন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, গতবারের মতো ভারত থেকে পর্যাপ্ত গরু এখানে আসেনি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কম এলেও গত সপ্তাহ থেকে মোটামুটি মিলছে। যা আসছে তাতে সঙ্কট হবে না। আর এবার এখানকার খামারে গরু পাওয়া যাচ্ছে। একই কথা বললেন পাবনার অপর ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক।
পুটখালীর অপর খাটাল মালিক সেলিম রেজা পিন্টু বাংলানিউজকে জানান, ভারত থেকে দেড়মাস আগে গরু না আনতে পেরে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আশঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম আমাদের ব্যবসাই হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু না সে আশঙ্কা কেটে গিয়েছে। মনে হচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নমনীয় হয়েছেন আমাদের ঈদ সামনে দেখে। দু’ সপ্তাহ আগে থেকে গরু আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এসএস/আরআই