রাজশাহী: রাজশাহীতে এবার ফিরতি টিকিটের জন্য হাহাকার। ঈদ ফেরত কর্মস্থলমুখি মানুষের জন্য ট্রেন-বাস কোথাও টিকিট নেই।
নাড়ির টানে অনেক দুর্ভোগের মধ্যে বাড়ি এলেও বিড়ম্বনার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিরতি টিকিট। বাস অথবা রেল, রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আগামী এক সপ্তাহের জন্য কোথাও টিকিট নেই।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ঈদের ফিরতি আগাম টিকিটের জন্য আসা মহানগরীর শিরোইল কলোনি এলাকার অধিবাসী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভোর ছয়টার আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু সকাল দশটার দিকে কাউন্টারের সামনে যেতেই জানিয়ে দেওয়া হয় আজকের সব টিকিট শেষ।
অথচ লাইনের বাইরে থাকা অনেকের হাতে টিকিট দেখা গেছে। কেউ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগে থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করে টিকিট পেয়েছেন। আবার দেখা গেছে একজন ব্যক্তি নিজের যাত্রা বাতিলের কথা জানিয়ে কৌশলে বিভিন্নজনের কাছে একাধিক টিকিট বিক্রি করেন, দাম নেন বেশি।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল নয়টা থেকে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ওইদিন বিক্রি হয় ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিক্রি হয় ২৮ সেপ্টেম্বরের টিকিট, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিক্রি হয় ২৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট। আর শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট দেওয়া হয়। এছাড়া রোববার বিক্রি হবে ১ অক্টোবরের ফিরতি ট্রেনের আগাম টিকিট।
কিন্তু টিকিট বিক্রির আগেই উধাও হয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত দিনে টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণ পরই কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ফলে এ নিয়ে রেল যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। রেলস্টেশনে বিভিন্ন সময় দেখা দিচ্ছে উত্তেজনা।
অভিযোগ রয়েছে, টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার থেকেই টিকিট কেটে রাখছেন রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী। এসি, নন এসি টিকিটের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে আগেই। এর মধ্যে থেকে কিছু টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু দেওয়া হচ্ছে তদ্বিরকারী টিকিট প্রত্যাশীদের হাতে।
ফলে কাউন্টারে বিক্রি শুরুর পর পরই টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ট্রেনের টিকিট কলোবাজারি নিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন তৈরির সময় পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপকের উপস্থিতিতেই এসএটিভির দুই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন রেলের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ সময় পশ্চিমাঞ্চল রেলের এডিশনাল চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেট শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ওপর চড়াও হন এবং লাঞ্ছিতও করেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শহিদুল ইসলাম কথা বলতে না চাইলেও টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের নবনিযুক্ত সুপারিনটেন্ডেট আমজাদ হোসেন।
তিনি দাবি করে বলেন, এমন তথ্য তার জানা নেই। ঈদের টিকিট কালোবাজারি ও অসাধু চক্র ঠেকাতে তাদের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ কালোবাজারির চেষ্টা করলে তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাদের মধ্যে কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে রাজশাহীর হানিফ এন্টারপ্রাইজের টিকেট মাস্টার শফিকুল ইসলাম জানান, ঈদে ঢাকা থেকে রাজশাহী নেমেই অনেকে বাসের ফিরতি টিকিট করেছেন। আবার অনেকে স্বজনদের মাধ্যমে আগাম টিকিট কেটেছেন। ফলে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীমুখী প্রায় সব কোচের টিকিট ফুরিয়ে গেছে। এখানে তাদের করার কিছু নেই। তবে ৩ অক্টোবর থেকে চাপ কমবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএস/এএসআর