ঢাকা: দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য সরু, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এজন্য এসব এলাকায় প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
তবে ৬১টি সেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, এসব সেতুর উপর দিয়ে চলাচলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বর্ড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়কে নির্মিত ১০৬টি সেতুর ওপর একটি প্রাক-জরিপ সম্পন্ন করেছে।
ওই জরিপে দেখা যায়, ১০৬টি সেতুর মধ্যে ৬১ সেতুই সরু, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসবের উপর দিয়েই শঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হয় নানা ধরনের যানবাহনকে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সেতুতে অধিকাংশ সময়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদে বাড়তি গাড়ির চাপ কিংবা পণ্য বোঝাই যানবাহনকে বেশ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ রয়েছে উত্তরবঙ্গের রংপুর জেলায় ১৯টি। এরপর পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহীতে ১৬টি, দক্ষিণাঞ্চলের গোপালগঞ্জে ৭টি, খুলনায় ৯টি, বরিশালে ৯টি এবং নরসিংদী জেলায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে।
জাইকার প্রিপারেটরি সার্ভে টিম এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষা চালিয়ে এসব সেতুকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অর্থাভাবে বিদ্যমান অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ও অনিরাপদ ব্রিজ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও ট্রাফিক জ্যামের জন্য এসব ব্রিজ অনেকাংশে দায়ী। ’
‘দেশে ৬১টি ব্রিজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদসহ নানা উৎসবের সময় যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। তখন আমাদের শঙ্কা আরও বেড়ে যায়। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঝঁকিপূর্ণ সেতু নিরাপদ করতে ‘ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় ছোট এবং মাঝারি ৬১ সেতু প্রতিস্থাপন এবং পুনরায় নির্মাণের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ নিরাপদ করা হবে।
নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরাপদ করার জন্য নরসিংদী জেলায় একটি বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকার অর্থায়ন করবে এক হাজার ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং এক হাজার ৯০৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা সহযোগিতা হিসেবে পাওয়া যাবে।
প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭১৫ মিটার সেতু নির্মাণ, ৩৩ দশমিক ২১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ এবং বাঁধের জন্য মাটির ভরাটের কাজ করা হবে সাড়ে ৭ লাখ ঘন মিটার।
এছাড়া এর আওতায় ৪২ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, পরামর্শক সেবাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। কেনা হবে প্রয়োজনীয় যানবাহনও।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘৬১ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের মধ্যে ১০টি মাঝারি ধরনের ব্রিজ ওয়েদারিং স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হবে যা আমাদের দেশে নতুন প্রযুক্তি। তবে কোন ১০টিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। ’
সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা বিভাগ) মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদসহ নানা উৎসবে সড়কে ওভার লোডিং হয়। ওভার লোডিং হয় ব্রিজের ওপরেও। অনিরাপদ ব্রিজ থাকলে আমাদের মধ্যেও একটি শঙ্কা থাকে।
৬১টি ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ নিরাপদ করার জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখনও পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। ’
এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে বলে করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এমআইএস/এমএ