ঢাকা: ছয় বছরের পুষ্পিতা দেবনাথ বড় বোনের জন্য অপেক্ষায় বসে আছে গাছের নিচে। উপচে পড়া ভিড় ঠেলে রোদের মধ্যে বাবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে বড় বোন এগারো বছরের সুস্মিতা বেদনাথ রাইডে চড়ার চেষ্টা করছেন।
বোন রাইড থেকে ফিরলেই তার সঙ্গে অন্য একটি রাইডে চড়বে পুষ্পিতা। মা সুপর্ণা বেদনাথের সঙ্গে বসে আছে সে। সঙ্গে ছয় বছরের ফৌজিয়া ও তার মা শাহানাজ পারভীনও রয়েছেন।
এরা সবাই ঈদের দ্বিতীয় দিন শনিবারের (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলটা আনন্দে কাটাতে একসঙ্গে শাহবাগের জাতীয় শিশুপার্কে এসেছেন উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে। দুপুর রোদে তাদের খাণিকটা কষ্ট হলেও আনন্দ ভাগাভাগি করছেন একসঙ্গে।
কথা হলো পুষ্পিতার মা সুপর্ণা ও ফৌজিয়ার মা কামরুন্নাহারের সঙ্গে। ঈদ বা পূজার ছুটিতে এ দুই পরিবার একসঙ্গে কাটান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সুপর্ণা দেবনাথ বাংলানিউজকে জানান, তাদের বাসা উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে। ঈদের দ্বিতীয় দিনটা বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দময় সময় কাটাতে প্রতিবেশী কামরুন্নাহারের পরিবারের সঙ্গে শিশুপার্কে এসেছেন।
শুধু সুপর্ণা বেদনাথ নন, অনেক সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষ শিশুপার্কে এসেছেন তাদের বাচ্চাদের নিয়ে। ঈদের আনন্দ যেনো এদের সবাইরই সমান।
![](files/September2015/September26/park_inner_476786610.jpg)
কথা হয় রামপ্রসাদ মণ্ডলের সঙ্গে। স্ত্রী নিতু মণ্ডল ও ছয় বছরের শিশু সাম্য মণ্ডলকে নিয়ে একসঙ্গে আনন্দে সময় কাটাতে এসেছেন শিশুপার্কে।
সাম্য মণ্ডল রোদে ক্লান্ত। কথা বলবে না ও। মা নিতু মণ্ডল ও বাবা রামপ্রসাদ মণ্ডল সাম্যকে কথা বলানোর চেষ্টা করছিলেন। ক্লান্ত হলেও অন্য শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন রাইডে চড়ার বায়না রয়েছে তার।
এনামুল হক বিপুল বিভিন্ন রাইডের টিকিট একসঙ্গে কাটছেন তার শিশুদের জন্য। দুপুরে প্রচণ্ড রোদে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিপুলের স্ত্রী তামান্না, মেয়ে ফাতেমা জান্নাত ইফরা ও ছেলে ওমর ফারুক তানভী। সঙ্গে তামান্নার ছোট বোন রুবাইয়া ইয়াসমিন।
এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে তারা রোদ ঠেকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। টিকিট নিয়ে এসে এনামুল হক বিপুলও সেই ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে চাইছেন।
বিপুল বলেন, রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে শিশুদের। বড় গাছপালা থাকলে ভালো হতো। পার্কের পাশে গাছ থাকলেও বিভিন্ন রাইডের আশেপাশে গাছ নেই।
উত্তরা থেকে আসা সুপর্ণা বলেন, শিশুদের বিনোদনের জন্য যেসব ব্যবস্থা আছে, তা যথেষ্ট না হলেও, ওরা আনন্দ পাচ্ছে। তবে বিনোদনের পাশাপাশি শিশুদের শেখানোর মতো কিছু নেই এখানে। রেসকোর্স ময়দানের ভেতরেই তো আছি, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নেই। অথচ বঙ্গবন্ধু এখানে দাঁড়িয়েই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন।
![](files/September2015/September26/park_inner_3_700213219.jpg)
অবশ্য পার্কের পেছনের দিকে (দক্ষিণ) খুঁজে পাওয়া গেলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার স্থান উল্লিখিত একটি ফলক। পার্কের মধ্যে এছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেলো না, যাতে শিশুরা ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে জানতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে শিশুপার্কে এসেছেন শাহানাজ পারভীন। সঙ্গে মেয়ে নাইমু ইসলাম, ছেলে সাইফুল ইসলাম, স্বামী নুরুল ইসলাম এবং ছোট বোন জাহানারা বেগম।
ঈদের ছুটিতে সবাই একসঙ্গে শিশুপার্কে এসেছেন। এ যেনো ঈদের ছুটিতে ধর্ম-শ্রেণী নির্বিশেষে বাঙালির উৎসবে যোগ দেওয়া।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, ঈদে বেশি ছুটি পাওয়া যায় বলে, এ সময়টায় আনন্দে কাটান তারা। বাসায় শুধু খাওয়া-দাওয়া করে সময় নষ্ট না করে, উৎসবে মেতে ওঠার এ যেনো এক সুবর্ণ সুযোগ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএমএ/আরএম