ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মিনা ট্র্যাজেডি

ফেনীর নিখোঁজদের বাড়িতে শোকাবহ পরিবেশ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
ফেনীর নিখোঁজদের বাড়িতে শোকাবহ পরিবেশ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: হজ শেষ করে বাবা বাড়ি ফিরবেন। জমজম কূপের পানি নিয়ে আসবেন।

সে পানি পান করার আশা নিয়ে পথ চেয়ে আছে নুসরাত, তানিম আর ফাহিম। কিন্তু এখন বাবার ফেরা নিয়ে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে তিন ভাই-বোন। কারণ মিনায় পদদলিত হয়ে ৭ শতাধিক হাজি নিহতের ঘটনায় তাদের বাবা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

ফেনী পাইলট হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেমের তিন সন্তান এভাবেই অপেক্ষায় রয়েছে বাবার জন্য। অথচ বাবার কোনো খোঁজ মিলছে না। তাদের বাড়িতে বিরাজ করছে শোকের আবহ।

একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নুসরাত বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবার কোনো খোঁজ আপনারা এনে দিতে পারবেন? আমার ছোট দুই ভাই বাবার চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

স্বামীর কোনো খোঁজ না পেয়ে তিন দিন দানাপানিও পেটে পড়েনি স্ত্রী হাসিনা আক্তারের।   তারও একটাই চাওয়া, সরকার কিংবা কোনো সংবাদমাধ্যম যদি তার স্বামীর খবর এনে দিতো!

একই অবস্থা শহরের খাজুরিয়া এলাকায় নুরুল হুদা দুলালের বাসায়। তিনিও নিখোঁজ রয়েছেন মিনায় পদদলিত হওয়ার ঘটনায়। নুরুল হুদার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে নাজমুল হুদা নিরব বাংলানিউজকে জানান, তারা চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। কেউ তার বাবার খোঁজ দিতে পারছে না। তার মা না খেয়ে আছেন। ছোট ভাই নিবিড়, নিতুলের চোখের পানি মুছে দেওয়ার কোনো সংবাদ তার কাছে নেই।

নিরবের একটাই দাবি, বাংলাদেশ সরকার তার বাবার খোঁজ এনে দেবে। যদি মৃত্যু সংবাদও পেতেন তাহলেও একটা সান্ত্বনা দিতে পারতেন ছোট ভাইদের। নুরুল হুদার পরিবার মৃত্যু শোকে কাঁদতেও পারছে না। কারণ সে তথ্যও যে তাদের কাছে নেই, পথ চেয়ে খোঁজের উপেক্ষা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।

মিনায় পদদলিত হওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন ফেনীর ৫ জন। এরা হলেন- ফেনী পাইলট হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেম, শহরের ট্রাংক রোডের ওষুধ ব্যবসায়ী খাঝুরিয়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরুল হুদা দুলাল, জেলার সোনাগাজীর চরগণেশ এলাকার বিবি ফাতেমা আক্তার, একই উপজেলার সুজাপুর শুয়াখালী এলাকার আমিনুল ইসলাম, ফেনী সদরের বালুয়া চৌমুহনী এলাকার জয়নব বিবি।

আর যাদের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে তারা হলেন- সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের কলিম উদ্দিন মুন্সি বাড়ির নুরন্নবী মিন্টু (৬৯) ও একই উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের শুলাখালি গ্রামের তাহেরা বেগম (৭৩),  একই উপজেলার শুয়াখারী গ্রামের বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী নুর জাহান ও পরশুরাম উপজেলার চিথলীয়া জয়নাল আবদীনের স্ত্রী খালেদা আক্তার। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত তাহেরা বেগমের ছেলে বাংলানিউজকে জানান, তার মা হজ করতে গিয়ে মিনায় পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ায় তাদের কোনো আফসোস নেই। পবিত্র জায়গায় গিয়ে মা মারা  গেছেন। আল্লাহর কাছে তার মায়ের জন্য জান্নাত কামনা করেছেন তিনি।

নিখোঁজ হওয়া ফেনী পাইলট হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আবুল কাশেমের স্ত্রী হাসিনা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টা নিয়ে সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকার চরম উদাসিনতার পরিচয় দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে একটা নিশ্চিত সংবাদ তারা পেতেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শুনেছি মিনায় পদদলতি হওয়ার ঘটনায় ফেনীর চারজন নিহত ও পাঁচজন নিখোঁজ হয়েছেন। আমরা আমাদের বৈদেশিক শাখার মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সঠিক সংবাদ পেলে আমরা তা নিশ্চিত করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
পিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।