ঢাকা: ‘আমি বেচেঁ আছি, আপনি ভাইয়ের খবর নেন। ভাইকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সৌদি আরবের মিনায় ‘শয়তান স্তম্ভে’ পাথর ছোড়ার সময় পদদলিত হয়ে দেশটির সরকারি হিসাব মতে ৭১৯ হাজি নিহত হন। এ ঘটনায় অনেক বাংলাদেশি হাজি এখনও নিখোঁজ। জাহিদুল ইসলাম তাদের মধ্যে একজন।
দুই ভাই জাহিদুল ইসলাম (৪০) ও খায়রুল ইসলাম (৩৫) এক সঙ্গে হজে গিয়েছিলেন। শয়তান স্তম্ভে পাথর ছোড়ার জন্য জাহিদুল মিনা’র উদ্দেশ্যে রওনার দেওয়ার আগ মূর্হতেও স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের (৩৫) সঙ্গে কথা বলেন বলে বাংলানিউজকে জানালেন তার বড় ভাই আমিনুল ইসলাম।
![](files/September2015/September28/Hajj_missing_1_269557710.jpg)
শনিবার (২৬ সেপ্টম্বর) শাহনাজ পারভীন বলেন, মিনায় যাওয়ার একটু আগেও সন্তানসহ বাবা-মা’র খোঁজখবর নিয়েছেন। মোবাইলে দুই ভাই আমাদের সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। সবার খোঁজখবর নিয়ে দোয়া চেয়ে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এর কিছুক্ষণ পরই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘ সময় পর আমার দেবর খায়রুল ফোন দিয়ে বলেন, ‘ভাবী আমি বেচেঁ আছি। আপনি ভাইয়ের খবর নেন। ভাইকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ’
এ খবর শোনা মাত্রই পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। শাহনাজ পারভীন বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। বৃদ্ধ পিতা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। বার বার তিনি তার ছেলের খবর জানতে চাচ্ছেন। জাহিদুল ইসলামের মেয়ে তাসমিয়া ও ছেলে ইয়াসিন বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য কান্নাকাটি করছে, কিভাবে তাদের বোঝাবেন, সে ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন পরিবারের সদস্যরা।
জাহিদুলের বাবা হাজী নুরুল ইসলাম (৭৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। নিখোঁজ হওয়ার একটু আগেও আমার বাবা আমার খোঁজখবর নিয়েছে। আমাকে চিন্তা করতে মানা করেছে। ওর বড় ভাইদের বলেছে, তারা যেন আমার দেখাশুনা করে। আমরা কোরবারির জন্য গরু কিনেছি কিনা, সকালে নাস্তা করেছি কিনা, তারও খবর নিয়েছে।
সৌদি আরবে তথ্যকেন্দ্রে ফোন দিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন জাহিদের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম।
তিনি জানান, তারা ছয় ভাই। এর মধ্যে দুই ভাই ইতালিতে আছেন, দুই ভাই দেশে আর দুই ভাই হজে গেছেন। এর মধ্যে নিখোঁজ জাহিদুল এবারই প্রথম হজ করতে গেছেন। আর ছোট ভাই খায়রুল এর আগেও একবার হজ করেছেন। এবার তিনি মোয়াল্লেম’র (গাইড) দায়িত্ব পালন করছেন।
বড় ভাইকে খুঁজতে সৌদি আরবের হাসপাতালগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছেন ছোট ভাই। কোথাও কোনো খবর পাচ্ছেন না তিনি, জানান আমিনুল।
ঢাকার সবুজবাগ থানার দক্ষিণ রাজারবাগ এলাকায় তাদের বাসা। এ এলাকা থেকে এবার একসঙ্গে ১০ জন হজে গেছেন। এর মধ্যে দু’জন নিখোঁজ। আহত হয়েছেন ছয় জন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন মক্কায় শেষ বিদায়ী তাওয়াফ করছেন বলেও পরিবারকে জানিয়েছেন খায়রুল।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিনার বড় জামারাতে শয়তান স্তম্ভে পাথর ছোড়ার সময় পদদলিত হয়ে বিভিন্ন দেশের ৭১৯ জন হাজি নিহত ও আহত হন আরও অন্তত ৮৬৩ জন।
** ‘দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এজেডকে/আরএম