ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মিনা ট্র্যাজেডি

‘বাবাকে বাঁচাতে পারিনি’

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
‘বাবাকে বাঁচাতে পারিনি’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুমিল্লা: ‘ভাইরে বাবাকে বাচাঁতে পারিনি আর মাকে খুঁজে পাচ্ছি না। তুই যে আমাকে তাদের দেখভালের জন্য সাথে পাঠাইলি, আমি তো আমার দায়িত্ব পালন করতে পারলাম না।



বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় এবি এম আবুল কালাম সৌদি থেকে দেশে তার ভাই কামাল হোসেনকে মোবাইল ফোনে বাবার মৃত্যু আর মায়ের নিখোঁজ সংবাদ জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের গজারিয়া চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা আবদুল লতিফ(৭৫) তার স্ত্রী মরিয়মনেছা ও ছেলে এবিএম আবুল কালামকে নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর হজে যান।

বৃহস্পতিবার(২৪ সেপ্টেম্বর) মিনায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এসময় আহত হন স্ত্রী মরিয়মনেছা ও ছেলে এবি এম আবুল কালাম। ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়ে পরে নিখোঁজ মাকে খুঁজে পান আহতাবস্থায়। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তারা এখন হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

সৌদি আরবের মিনায় ‘শয়তান স্তম্ভে’ পাথর ছোড়ার সময় পদদলিত হয়ে ৭৬৯ হাজি নিহত হয়েছেন। আব্দুল লতিফ তাদের মধ্যে একজন।

আব্দুল লতিফের বাসায় এখন শোকের মাতম। বাবাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সন্তানরা। পরিবারের সাথে ঈদ করতে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন লতিফের আরেক ছেলে কামাল হোসেন।

বাবাকে হারিয়ে নির্বাক প্রবাস ফেরত সন্তান কামাল হোসেন ও মেয়ে হাজেরা বেগম। কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুবাই থেকে আমার ভাই এবি এম আবুল কালামকে ফোনে বলেছি, ভাই মা-বাবাকে একা হজে পাঠানো ঠিক হবে না। ভাই তুমিও যাও। তুমি তাদের খেয়াল রাখবে। তারা তিনজন গেল। কিন্তু বাবা তো আর ফিরে আসবে না।

তিনি বলেন, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় বাবা ও মা ভাইয়ের সাথে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দুঘর্টনার পর বাবা-মা ভাইয়ের হাত থেকে ছুটে যায়। ভাইও পদদলিত হয়। হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে ভাই জানতে পারে বাবা পদদলিত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। আর মা নিখোঁজ রয়েছেন। তখন ভাই আমারে ফোন করে এ সংবাদ দেয়। পরে মাকে খোজাঁখুজি করে আহতাবস্থায় হাসপাতালে পাওয়া যায়।

নিহত হাজী আবদুল লতিফের ছোট ভাই মো. শহীদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ভাই হজে যাওয়ার আগে আমরা সবাই এক সাথে খাওয়া-দাওয়া করেছি।

হজে যাওয়ার পর আর ভাইয়ের সাথে কথা হয়নি। ভাতিজার সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কথা হয়েছে। খাওয়ার টেবিলে এক সাথে খাইলাম, সেখানেই শেষ কথা হয়েছিল। আর তো খাওয়া টেবিলে ভাইকে পাবো না।

নিহতের পরিবার আশা করছেম হজের মতো পূণ্যের কাজে তাদের মৃত্যুবরণ হয়েছে। তাই তাদের জানাজা ও দাফন জান্নাতুল মাওয়াতেই দেবে সৌদি সরকার।

নিহতের ছোট ভাই মো. শহীদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ভাতিজার সাথে ফোনে (২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে) কথা হয়েছে। সে সৌদি সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে ভাইয়ের দাফন যাতে জান্নাতুল মাওয়াতে করা হয়। আমরা সেই আশাতে রয়েছি। নিহত আবদুল লতিফের ২ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে।

** ‘আমি বেঁচে আছি, ভাইয়ের খবর নেন’
** ‘দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।