ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কে নরকের দুর্ভোগ: ভোগান্তিতে পর্যটক

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
সড়কে নরকের দুর্ভোগ: ভোগান্তিতে পর্যটক ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিছানাকান্দি যান ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার বাসিন্দা মানিক মিয়া ও তার বন্ধুরা। কিন্তু রাস্তার ভোগান্তিতে সুখকর হয়নি তাদের ভ্রমণ।



সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। এভাবে প্রতিনিয়ত তাদের মতো ভাঙা সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সিলেটে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের।  

কথা হয় ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে সস্ত্রীক জাফলংয়ে বেড়াতে আসা এক বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা মুর্শেদ আহমদের সঙ্গে। বাংলানিউজের কাছে ভ্রমণের অতৃপ্ত দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, আনন্দদায়ক ভ্রমণ হিসেবে সিলেটে এসেছিলাম। কিন্তু সড়কের ভোগান্তির কারণে দ্বিতীয় বার আসার আগ্রহ নেই।

সিলেটের আরেক পর্যটন অঞ্চল জাফলংয়েও সড়কের বেহাল দশা প্রকট। পর্যটকরা একবারের জন্য দুর্ভোগ পোহালেও স্থানীয়দের বার বার এসব সড়ক মাড়িয়ে চলতে হয়।

পর্যটন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মতে, রাস্তার ভোগান্তির কারণে পর্যটকদের আনাগোনা আশঙ্কাজনকহারে কমেছে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটন অঞ্চল সিলেটের জাফলং, লালাখাল, বিছানাকান্দি, পান্থুমাই, শ্রীপুর, রাতারগুল, হাকালুকি হাওরসহ চা বাগান দেখতে আসছেন পর্যটকরা।

কিন্তু নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে ‘সড়কের নরক ভোগান্তি’ পোহাতে হচ্ছে মন্তব্য অনেকের।

সিলেট নগরীসহ মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সৃষ্ট খানা খন্দ সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। কোথাও সৃষ্ট বড় বড় গর্তে যানবাহন আটকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বর্ষায় গর্তগুলো কাদাজলে টইটুম্বুর।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট সড়ক ও জনপথের (সওজ) ৪৯০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশতেই যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আর এব্ড়ো-থেবড়ো রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলে নৌকার মতো হেলেদুলে। রাস্তার কাদা ছিটকে পড়ে পথচারির গায়ে। ফলে দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে প্রতিনিয়ত। ফলে গর্ত পাশ কাটিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে যানবাহনে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহত্তম পাথর কোয়ারি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে আহরিত পাথর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তাঘাট, অট্টালিকা নিমার্ণের কাজে লাগলেও এই সড়কের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যয় হচ্ছে না পাথর।

এছাড়া সিলেট থেকে তামাবিল-জাফলংয়ের ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব। পর্যটন, বাণিজ্যিকসহ নানা কারণে দেশে-বিদেশে সড়কটি অতি পরিচিত। সওজের হিসাব অনুসারে, এই সড়কে জৈন্তাপুর থেকে জাফলংয়ের দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার। আর এই দূরত্বেই ৫ শতাধিক বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ১৬ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা মাহতাব উদ্দিন।

একইভাবে সিলেট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে হাকালুকি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে সড়কের দুর্দশার কারণে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টের বাসিন্দা আবুল হোসেন গেদা বাংলানিউজকে বলেন, মিনি কক্সবাজার খ্যাত হাকালুকি দেখতে পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমান। কিন্তু উপজেলার প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে সব ক’টি সড়কের বেহাল অবস্থা। যে কারণে পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সিলেটের জাফলংয়ের বাসিন্দা মিনহাজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন অঞ্চল খ্যাত জাফলংয়ের সিলেট-তামাবিল সড়কে চলতে গিয়ে নরকের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বড় বড় গর্তে গাড়ি আটকে র্দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

রাস্তার দুর্ভোগের কারণে জাফলংয়ে পর্যটক সংখ্যা কমেছে দাবি করেন জাফলং পিকনিক স্পটের ক্ষুধা রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম বিক্রমপুরী। সড়কের করুণ চিত্র তিনি প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে আসছেন, যদি সংশ্লিষ্টদের নজরে পড়ে।

সড়কের দুরবস্থার ব্যাপারে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)নির্বাহী প্রকৌশলী  শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষার কারণে সব ক’টি সড়কে উন্নয়ন আধাগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে খানা খন্দ বেশি।

তিনি বলেন, সিলেটে সওজের আওতাধীন ৪৯০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। তন্মধ্যে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ ৩১ কিলোমিটার, তামাবিল পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার, জকিগঞ্জ ৯১ কিলোমিটার, বিয়ানীবাজার ৩৩ কিলোমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ ৩৩ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ ২২ কিলোমিটার এবং জাতীয় মহাসড়কে ১৪০ কিলোমিটার ছাড়াও জেলা সড়কে আরো কিছু সড়ক রয়েছে সওজের আওতাধীন। এসব সড়কের কোনোটিতেই এখনো টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়নি।

শুধু গর্ত ও খানা খন্দ মেরামতে ৯টি গ্রুপে সওজের কর্মচারিরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টির মৌসুম পার হলে টেন্ডারের মাধ্যমে পুরো দমে রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।          

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৫
এনইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।